দক্ষিণা সামান্য, ভাড়ায় ডাক্তার পাচ্ছে না রাজ্য

বছরখানেক আগে স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে বেসরকারি চিকিৎসক ভাড়া করবে তারা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্যে চিকিৎসকের, বিশেষত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি কোথায় পৌঁছেছে, দিল্লির পরিদর্শকদের সামনে অন্য মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার ধার করে কুমির-ছানা দেখানোর ঘটনাতেই তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এ বার ভাড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খুঁজতে গিয়েও হতাশায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর!

Advertisement

বছরখানেক আগে স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে বেসরকারি চিকিৎসক ভাড়া করবে তারা। বিশেষ করে জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরের হাসপাতাল চালাতে গেলে বেসরকারি চিকিৎসক ছাড়া যে কোনও গতি নেই, সেটা বুঝতে পেরেই ওই বিজ্ঞপ্তি।

সরকারি সূত্রের খবর, এই সময়ের মধ্যে কলকাতায় মাত্র এক জন ডাক্তার ভাড়ায় চিকিৎসা করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু জেলায় তেমন নজিরের কথা এখনও শোনা যাচ্ছে না।

Advertisement

পরিস্থিতির মোকাবিলায় চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র রাজ্য শাখা গত ২৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আইএমএ-র সদস্য বেসরকারি চিকিৎসকেরা যে-জেলায় প্র্যাক্টিস করেন, তাঁরা সেখানকার কোনও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে ভাড়ার বিনিময়ে পরিষেবা দিতে রাজি আছেন। তবে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, এই কাজের জন্য এক জেলার চিকিৎসককে অন্য জেলায় পাঠানো হবে না। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এখনও কোনও উত্তর আসেনি।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এসএসকেএম হাসপাতালে নাক-কান-গলার ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য এক জন বিশেষজ্ঞ অঙ্কোসার্জন গত ১ নভেম্বর কাজ শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত আটটি অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। ওই হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘নাক-কান-গলার ক্যানসার নিয়ে রোজ এখানে ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী আসেন। তাঁদের অর্ধেকের অস্ত্রোপচার দরকার। চাপ সামলাতেই আমরা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এক জন অঙ্কোসার্জন চেয়েছিলাম।’’ সৌরভ দত্ত নামে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতি শনিবার বহির্বিভাগে বসছেন। অস্ত্রোপচার করছেন সোম ও বৃহস্পতিবার। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘এক ঘণ্টা পরিষেবা দিয়ে এক হাজার টাকা পাই। এক দিনে সব থেকে বেশি আয় ছ’হাজার টাকা, সপ্তাহে ১৮ হাজার। এত কম উপার্জনে পরিষেবা দেওয়ার কাজটা তাঁর ‘মনের শান্তি’ বলে জানাচ্ছেন সৌরভবাবু।

প্রবীণ চিকিৎসক মণি ছেত্রী দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতি সোমবার এসএসকেএমে বিভিন্ন চিকিৎসকের রেফার করা নির্দিষ্ট কিছু রোগীকে দেখেন বিনা পয়সায়। এর জন্য সরকার আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। এক বার ঠিক হয়েছিল, বেসরকারি এক বন্ধ্যত্ব-বিশেষজ্ঞ এসএসকেএমে সপ্তাহে এক দিন রোগী দেখবেন। দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকার পরে পরিকল্পনাটি বাতিল
হয়ে যায়।

কলকাতায় যৎসামান্য সাড়া মিললেও জেলায় ভাড়ার ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না কেন?

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের একাংশের মতে, উপার্জনের অঙ্কটাই সাড়া না-দেওয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ভাবে শহরের কোনও বড় কর্পোরেট হাসপাতালে এক দিন রোগী দেখলেই অনায়াসে ২০ হাজার বা তার বেশি টাকা রোজগার হয়। অস্ত্রোপচার করলে তো রোজগার অনেকটাই বাড়ে। তা হলে অনেক কম টাকায় কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে যাবেন কেন? তাই তাঁরা কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।

তা হলে সমাধানের উপায় কী?

স্বাস্থ্যকর্তারা বুঝতে পারছেন, পরিষেবার বিনিময়ে টাকার অঙ্ক অনেকটাই বাড়াতে হবে। নইলে সমস্যার সুরাহা হবে না।

কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তাদের এই উপলব্ধিটা নবান্ন বুঝতে পারছে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন