হেরিটেজের জন্য কেন্দ্রের ১০০ কোটি

এ শহরের বিভিন্ন ব্রিটিশ স্থাপত্যের হারানো জৌলুস ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতীয় গ্রন্থাগার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, মেটকাফ হল, প্রাচীন টাঁকশাল ঢেলে সাজাতে আপাতত কেন্দ্রের তরফে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০২:৫১
Share:

ফাইল চিত্র।

এ শহরের বিভিন্ন ব্রিটিশ স্থাপত্যের হারানো জৌলুস ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতীয় গ্রন্থাগার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, মেটকাফ হল, প্রাচীন টাঁকশাল ঢেলে সাজাতে আপাতত কেন্দ্রের তরফে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

Advertisement

শুধু কলকাতা নয়, চেন্নাই, তিরুঅনন্তপুরম, ডালহৌসির মতো শহরের জন্যও এই ধরনের উদ্যোগ হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা এবং সংস্কৃতি সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বার আলোচনা করেছেন মোদী। কলকাতার প্রকল্পটি দ্রুত রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আমলা রাঘবেন্দ্র নিজেই। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে কাজ। বারবার কলকাতা এসে কাজের গতি তদারকি করছেন রাঘবেন্দ্র।

জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিতরে জায়গা অনেক। কিন্তু পুরো গ্রন্থাগারটি বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ করা সম্ভব নয়। সিপিডব্লিউডি-র বাজেট থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ করে বেলভেডিয়ার হাউস চত্বরে তাই গড়ে উঠছে চারটি স্থায়ী প্রদর্শনী, চার বাঙালি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়ে। এই চার জন হলেন রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র বসু, বঙ্কিমচন্দ্র এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। দেশ-বিদেশের অতিথিদের কথা মাথায় রেখে সেখানে উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। একটি গবেষকদল জাতীয় আর্কাইভকে ব্যবহার করে প্রদর্শনীর উপাদান সংগ্রহ করছেন। আধুনিক প্রযুক্তির এলসিডি পর্দা ব্যবহার করে চারটি প্রদর্শনী তৈরি হবে।

Advertisement

মেটকাফ হল থেকে হুগলি নদী দেখা যায়। এই বাড়ির একতলায় তৈরি হচ্ছে কলকাতা মিউজিয়াম। সেখানে নানা অনুষ্ঠান হবে। বসবে আলোচনাসভা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ। রয়াল গ্যালারি, পোর্ট্রেট গ্যালারি, দরবার হল— সর্বত্র কাজ চলছে। ভিতরটা পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে। কলকাতা মিউজিয়াম নিয়েও বড় পরিকল্পনা রয়েছে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে। রাঘবেন্দ্র বলেন, কলকাতা শহরের প্রাচীন ঐতিহ্যকেই আমরা ফিরিয়ে আনতে চাইছি। পুরোনো টাঁকশালের কাজও চলছে পুরোদমে। কিছু দিনেই তা শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শুধু প্রশ্ন উঠছে একটি ব্যাপারেই। চার জন বাঙালিকে নিয়ে যে স্থায়ী প্রদর্শনীর ভাবনা হয়েছে, সেখানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কেন রয়েছেন? কৃতী বাঙালি আর কি কেউ ছিলেন না? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের প্রশ্ন, ‘‘এর পিছনে কি সেই গেরুয়া রাজনীতি রয়েছে?’’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র শ্যামাপ্রসাদের অবদান কোনও অংশেই কম নয়। বাংলায় ফজলুল হক মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী তিনি, পরে জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভারও সদস্য। বাঙালির গর্ব তিনি। সরকারের এই উদ্যোগে আমরা খুশি।’’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও শ্যামাপ্রসাদকে বেছে নেওয়ায় কোনও রাজনীতি দেখতে পাচ্ছেন না। বরং রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সংস্কার আজও শেষ হল না। কলকাতার সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল এলাকা আজ বিবর্ণ ইতিহাস| কেন্দ্রই শহরের প্রাণ ফেরাচ্ছে।’’

উত্তরে রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ববি হাকিমের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান তো কেন্দ্রেরই দেখভাল করার কথা! এখানে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করার যৌক্তিকতা কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন