গর্ভপাতে অনুমতি দিতে দোটানায় কোর্ট

লোকলজ্জা থেকে বাঁচতে তিনি গর্ভপাত করাতে চান। আবার যাঁর সূত্রে তিনি অন্তঃসত্ত্বা বলে তরুণীটির অভিযোগ, তাঁর পিতৃত্ব প্রমাণে করাতে চান ডিএনএ পরীক্ষাও। কিন্তু আদালতের সমস্যা অন্য। গর্ভপাতের অনুমতি ওই তরুণীকে আদৌ দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নে দ্বিধায় কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৯
Share:

লোকলজ্জা থেকে বাঁচতে তিনি গর্ভপাত করাতে চান। আবার যাঁর সূত্রে তিনি অন্তঃসত্ত্বা বলে তরুণীটির অভিযোগ, তাঁর পিতৃত্ব প্রমাণে করাতে চান ডিএনএ পরীক্ষাও। কিন্তু আদালতের সমস্যা অন্য। গর্ভপাতের অনুমতি ওই তরুণীকে আদৌ দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নে দ্বিধায় কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

কীসের দ্বিধা?

গর্ভপাত করালে সমাজে তিনি মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন বলে ওই তরুণীর বিশ্বাস। কিন্তু অভিযুক্ত যুবক পরে ওই তরুণীকে বিয়ে করে সন্তানকে গ্রহণ করতে চাইলে তখন কী হবে? এই প্রশ্নেই দোলাচলে বিচারপতি। এ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের আগে সন্তানের বাবার বক্তব্য জানা দরকার বলে মনে করেন হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক। আদালত মনে করছে, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর মত জরুরি। তাঁর সন্তানের পিতা বলে তরুণী যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, আজ, মঙ্গলবার বেলা ২টোয় তিনি যাতে বক্তব্য জানান, সেই ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

Advertisement

ব্যারাকপুর-নোয়াপাড়ার বাসিন্দা ওই তরুণীর আইনজীবী রুদ্রজ্যোতি ভট্টাচার্য সোমবার আদালতে জানান, হোয়াটসঅ্যাপে বায়ুসেনার এক জওয়ানের সঙ্গে তাঁর মক্কেলের আলাপ হয় গত বছর। সেই জওয়ান এখন অম্বালায় কর্মরত। গত পুজোয় তিনি নোয়াপাড়ায় তাঁর এক পরিচিতের বাড়িতে আসেন। তরুণীর বাড়িতেও যান। সেই সময়েই এক দিন মন্দির থেকে আনা সিঁদুর পরিয়ে দেন ওই তরুণীর কপালে। সহবাস করেন একাধিক বার। ফিরে যাওয়ার সময় প্রতিশ্রুতি দেন, শীতে দু’মাসের ছুটি নিয়ে এসে আনুষ্ঠানিক বিয়ে করবেন।

তরুণীর আইনজীবী আদালতে জানান, নভেম্বরের গোড়ায় তাঁর মক্কেলের গর্ভলক্ষণ ধরা পড়ে। তিনি মোবাইলে জওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আদালতে তরুণীর অভিযোগ, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন শুনে ওই জওয়ান তাঁকে না-চেনার ভান করেন। গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেন। তার পরেও ওই তরুণী ফোনে অনেক বার জওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নোয়াপাড়া থানায় ওই জওয়ানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে হাইকোর্টে জানান তাঁর আইনজীবী। আদালতের কাছে তরুণীর আবেদন মূলত দু’টি।

• তিনি যাতে কোনও সরকারি হাসপাতালে গর্ভপাত করাতে পারেন, তার অনুমতি দিতে হবে।

• ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। কেননা ডিএনএ পরীক্ষাতেই আদালত নিশ্চিত হতে পারবে, ওই জওয়ানই তাঁর সন্তানের পিতা কি না।

ওই জওয়ানের খোঁজ মিলেছে কি না, রাজ্যের কৌঁসুলি শাক্য সেনের কাছে তা জানতে চান বিচারপতি। কৌঁসুলি জানান, খোঁজ মেলেনি। তরুণীর কৌঁসুলির কাছে বিচারপতি জানতে চান, গর্ভধারণের কত সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করানো যায়। আইনজীবী জানান, ২০ সপ্তাহ। তাঁর মক্কেল এখন ১৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

সরকারি আইনজীবী জানান, গর্ভপাত করা যাবে কি না, সরকারি হাসপাতালে সেই সিদ্ধান্ত নেয় দু’সদস্যের চিকিৎসকদল। তরুণীর উচিত, কোনও সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা। তরুণীর আইনজীবী জানতে চান, ডিএনএ পরীক্ষার কী হবে। বিচারপতি জানান, তরুণী আগে কোনও সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি পরে দেখা যাবে। বিচারপতি এর পরে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দকে ডেকে পাঠান। কৌশিকবাবু এলে বিচারপতি তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘‘গর্ভপাতের আগে ওই জওয়ানের বক্তব্য জানা প্রয়োজন। গর্ভপাতের পরে এসে ওই জওয়ান যদি তরুণীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন এবং সন্তানকে পেতে চান, তা হলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেবে।’’ ওই জওয়ানের বক্তব্য জেনে আজ, মঙ্গলবার ২টোয় আদালতে তা জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি। কৌশিকবাবু জানান, তিনি বায়ুসেনাকে কোর্টের নির্দেশ জানিয়ে দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন