কলকাতা হাইকোর্ট

কর্মবিরতির প্রতিবাদে মামলা আইনজীবীরই

আইনজীবীদের একাংশের মধ্যে কর্মবিরতির যে রেওয়াজ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে আদালত সরব হলেও কাজ হয়নি। এ বার কর্মবিরতির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ-মামলার প্রেক্ষাপটে আদালত বিষয়টি নিয়ে ফের সক্রিয় হল। মামলাটিতে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বার কাউন্সিলকে যুক্ত করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২২
Share:

আইনজীবীদের একাংশের মধ্যে কর্মবিরতির যে রেওয়াজ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে আদালত সরব হলেও কাজ হয়নি। এ বার কর্মবিরতির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ-মামলার প্রেক্ষাপটে আদালত বিষয়টি নিয়ে ফের সক্রিয় হল। মামলাটিতে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বার কাউন্সিলকে যুক্ত করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।

Advertisement

মামলাটি করেছেন হাইকোর্টেরই এক আইনজীবী। বৃহস্পতিবার শুনানিতে শ্রীকান্ত দত্ত নামে ওই আবেদনকারী আদালতকে জানান, কর্মবিরতি বন্ধ করতে ২০০২ সালে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া নির্দেশিকা জারি করেছিল। অথচ এ রাজ্যের আইনজীবীদের সংগঠনগুলি নির্দেশিকার তোয়াক্কা করছে না। বাদীপক্ষের সওয়াল শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, জাতীয় ও রাজ্য, দুই স্তরের বার কাউন্সিলকেই মামলায় পক্ষ করতে হবে। দু’সপ্তাহ বাদে তিনি মামলাটি শুনবেন।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে কাজে যোগ দেওয়া ইস্তক বিচারপতি চেল্লুর আইনজীবীদের হুটহাট কর্মবিরতির প্রবণতায় দাঁড়ি টানতে উদ্যোগী হয়েছেন। এক বার এক আইনজীবীর মৃত্যুতে আইনজীবীদের বড় অংশ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করলেও প্রধান বিচারপতি-সহ বেশ কিছু বিচারপতি এজলাস চালু রেখে নজির গড়েছেন। সে দিন তাঁদের আদালতে এসে কয়েক জন আইনজীবীও শুনানি করে গিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সার্বিক ভাবে কর্মবিরতির সংস্কৃতিতে খুব ছেদ পড়েনি। দোলের পর দিন (৬ মার্চ, শুক্রবার) রাজ্য হোলির ছুটি ঘোষণা করেছিল। রাজ্য বার কাউন্সিল আর্জি জানায়, ৬ মার্চ হাইকোর্টেও ছুটি দেওয়া হোক। প্রধান বিচারপতি রাজি হননি। হাইকোর্ট-সূত্রের খবর, বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে প্রধান বিচারপতি-সহ কয়েক জন প্রবীণ আইনজীবীর বিকল্প প্রস্তাব ছিল, ৬ মার্চ হাইকোর্ট বন্ধ থাকলে পরিবর্তে গ্রীষ্মাবকাশ, পুজো বা শীতের ছুটির এক দিন হাইকোর্ট খোলা রাখা হোক, যে দিন আইনজীবীরা শুনানি করবেন। অ্যাসোসিয়েশন শোনেনি।

Advertisement

ফলে সংঘাত বহাল। ইদানীং কর্মবিরতির দিনে অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত মেনে আইনজীবীদের সিংহভাগ এজলাসে আসছেন না বটে, তবে প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকে এজলাসে গিয়ে সওয়াল করেছেন। ‘‘কর্মবিরতির ডাক উপেক্ষা করার একটা প্রবণতা স্পষ্ট।’’— দাবি এক সূত্রের। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মবিরতির অনৈতিক দিকটা নিয়ে এখন আইনজীবীদের মধ্যেও ক্ষোভ চাপা থাকছে না।’’

হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য যেমন মনে করেন, আইনজীবী বা চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জায়গা নেই। ‘‘কারণ, ওঁরা সেবামূলক কাজে যুক্ত। ওঁদের কর্মবিরতি অনৈতিক।’’— বলছেন বিকাশবাবু। আর এক প্রবীণ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘বার কর্মবিরতি ডাকতেই পারে। কিন্তু কেউ আদালতে হাজির হলে বাধা দেওয়া যায় না। এটা দণ্ডনীয়।’’

প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকের অভিমত, শুনানিতে আইনজীবীরা এ ভাবে যদি গরহাজির থাকেন, তা হলে বিচারপতি চাইলে তিনিই মামলার একতরফা ফয়সালা করতে পারেন। এই মহলের দাবি, পুলিশের কেস রেকর্ড কিংবা অন্যান্য কাগজপত্র দেখে রায় দিতে বিচারপতির বাধা নেই।

বস্তুত মার্কিন মুলুকে তো বটেই, এ দেশের সুপ্রিম কোর্টেও অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবীদের সওয়াল ছাড়াই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এবং কর্মবিরতি-সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে এটা বড় হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এক প্রবীণ আইনজীবীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিচারপতিরা ইচ্ছে করলে আইনজীবী ছাড়া মামলার নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন। রেওয়াজটা সর্বত্র চালু হলে কথায় কথায় আইনজীবীদের কর্মবিরতি বন্ধ হতে বাধ্য।’’ আপাতত কলকাতা হাইকোর্টের এই মামলার কী নিষ্পত্তি হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন