Price Hike of Fertilizer

চাহিদার সুযোগে সারের চড়া দাম, দোষ কেন্দ্রকে

আলু চাষের গোড়াতেই সারে কালোবাজারির এমন অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানে। চাষিদের অভিযোগ, ১০:২৬:২৬ সারের ৫০ কিলোগ্রামের প্রতি বস্তার দাম ৩০০-৪০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০৬
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সার কিনতে চাই দু’বস্তা, দাম কত পড়বে?— ক্রেতা সেজে নির্দিষ্ট সারের নাম জানিয়ে ফোনে করা হয়েছিল এক বিক্রেতাকে। পূর্ব বর্ধমানের কালনার ওই বিক্রেতা জানালেন, বস্তা প্রতি দাম পড়বে ১৮৫০ টাকা। সরকারি দাম ১৪৭০ টাকা হওয়া সত্ত্বেও এত বেশি টাকা কেন দিতে হবে? জবাব মিলল না তাঁর কাছে।

Advertisement

আলু চাষের গোড়াতেই সারে কালোবাজারির এমন অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানে। চাষিদের অভিযোগ, ১০:২৬:২৬ সারের ৫০ কিলোগ্রামের প্রতি বস্তার দাম ৩০০-৪০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে। আলু চাষের জন্য অধিকাংশ চাষি এই সার ব্যবহার করেন। সেই চড়া চাহিদার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। কেউ কেউ আবার এক বস্তা ১০:২৬:২৬ সারের সঙ্গে অন্য একটি সার নিতে হবে— এমন শর্তে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।

রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতির জন্য আঙুল তুলেছে কেন্দ্রের দিকে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইফকো রাজ্যে ওই সার পাঠায়। এ ছাড়া কিছু সংস্থাও তা বিক্রি করে। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘আলু চাষে এই ১০:২৬:২৬ সার প্রচুর দরকার হয়। যা প্রয়োজন, আমরা কেন্দ্রের কাছে তার এক-তৃতীয়াংশ পেয়েছি। জোগান বাড়াতে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’ রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র সার কম পাঠিয়েছে। তবে বিক্রেতারা চাষিদের কাছে বেশি দাম নিচ্ছেন কি না, খোঁজ নেওয়া হবে।’’

Advertisement

চাষিদের দাবি, নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশের ভাল মিশ্রণ থাকা এই ১০:২৬:২৬ সারে আলু গাছের ভাল বৃদ্ধি হয়। কালনার চাষি খোকন মল্লিক, সুদীপ মণ্ডলদের অভিযোগ, ‘‘এ বার গোড়ায় বস্তা পিছু ১৬৫০ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছিল। এখন তা ১৮০০ টাকা ছাড়িয়েছে। চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’’ চাষিদের আরও অভিযোগ, ‘ই-পস’ যন্ত্রের মাধ্যমে সার বিক্রি করার কথা বিক্রেতাদের। সার বিক্রির পরে ওই যন্ত্র থেকে বিল বেরোয়। কিন্তু অনেক বিক্রেতা সেই বিল চাষিদের দিচ্ছেন না।

সার-ডিলারদের একাংশের দাবি, যে সব সংস্থা ১০:২৬:২৬ সার সরবরাহ করে, ডিলারদের উপরে তারা তাদের তৈরি অন্য সার বিক্রির জন্যও চাপ বাড়াচ্ছে। সেটির দাম ধরে নেওয়া হচ্ছে ১০:২৬:২৬ সারের দামের সঙ্গে। আবার কোথাও প্রতি বস্তা সারের সঙ্গে এক কেজি করে সালফার নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চাষিদের একাংশের দাবি, ইফকো-র সারের জোগানের ঘাটতির সুযোগ নিয়ে এ ভাবেই ব্যবসা চলছে।

কৃষি আধিকারিকদের অনেকে আবার এই পরিস্থিতির জন্য দুষছেন চাষিদের সচেতনতার অভাবকেও। তাঁদের দাবি, নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ ঠিক মাত্রায় রয়েছে— এমন সারের অভাব নেই। কিন্তু চাষিরা একটি নির্দিষ্ট সারে দীর্ঘদিন অভ্যস্ত হয়ে পড়ায়, তার বাইরে বেরোতে পারছেন না। ফলে, ওই সারটির চাহিদা বিপুল বেড়েছে। অথচ, অন্য সারেও তাঁরা ভাল ভাবে চাষ করতে পারেন।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা কৃষি গবেষক কৌশিক ব্রহ্মচারীর বক্তব্য, ‘‘শুধু মাত্র ১০:২৬:২৬ সারে নির্ভর না করে, চাষিরা আলাদা ভাবে উপযুক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ সার ব্যবহার করেও অনায়াসে চাষ করতে পারেন।’’ এ বিষয়ে প্রচার বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন