তাপস মামলা

নাগরিকের স্বার্থও দেখুন, বিচারপতি বললেন জিপি’কে

তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য সম্পর্কে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে যে মামলা হয়েছে, সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (গভর্নমেন্ট প্লিডার, সংক্ষেপে জিপি) তার গুরুত্ব আদৌ অনুধাবন করতে পারছেন কি না, সোমবার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিল, জিপি-র কাজ শুধু সরকারের পক্ষ নেওয়াই নয়, নাগরিকদের স্বার্থরক্ষাও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৪:০০
Share:

তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য সম্পর্কে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে যে মামলা হয়েছে, সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (গভর্নমেন্ট প্লিডার, সংক্ষেপে জিপি) তার গুরুত্ব আদৌ অনুধাবন করতে পারছেন কি না, সোমবার সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিল, জিপি-র কাজ শুধু সরকারের পক্ষ নেওয়াই নয়, নাগরিকদের স্বার্থরক্ষাও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

Advertisement

মামলাটি চলছে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। আগের দিনের শুনানিতে জিপি দাবি করেছিলেন, তাপস পালের মন্তব্য সংক্রান্ত একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয়েছে। তাই হাইকোর্টে আর মামলা দাখিল করা যায় না। দাবির সমর্থনে জিপি’র কাছ থেকে নথি চেয়েছিলেন বিচারপতি। এ দিন শুনানির শুরুতে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতির হাতে খামে বন্ধ একটি নথি তুলে দিয়ে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে তাপস পালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। নথিটি সেই আবেদন সংক্রান্ত। এর বিষয়বস্তু আমি জানি না।”

জিপি’র বক্তব্য বিচারপতি দত্ত মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে আবেদন জমা পড়েছে। তাই এটা এখন আর গোপনীয় নথি হতে পারে না।” বিচারপতি নথিটি পড়েন। পড়া শেষ হলে জিপি’র উদ্দেশে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের মামলাটির সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের মামলাটির বিষয়বস্তু আলাদা। সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ-মামলা হয়েছে। আর কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে।”

Advertisement

মামলার আবেদনকারী সুমিত সান্যালের কৌঁসুলি সুব্রত মুখোপাধ্যায় সওয়ালে দাবি করেন, “সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজুর পরেও একই বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা হতে পারে। মামলা গ্রহণ করতে হাইকোর্টের অসুবিধে নেই। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও রয়েছে।” জিপির যুক্তি, “তাপস পালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মামলাকারী পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কি না, বিচারপতি নিজেই সে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মামলাটি দায়ের হয়েছে আবেগবশত, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে। তাপস পালের মন্তব্যে মামলার আবেদনকারীর কোনও আঘাতও লাগেনি।” অশোকবাবুর বক্তব্য: মামলাটি শোনার এক্তিয়ার হাইকোর্টের নেই এমন কথা তিনি বলছেন না। “তবে এটা জনস্বার্থ-মামলা হিসেবে ডিভিশন বেঞ্চে শোনা যেতে পারে।” মন্তব্য করেন তিনি।

এই সময়েই মামলার গুরুত্ব অনুধাবনের প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি দত্ত। “আপনি মামলার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন?’’ জিপি’র কাছে জানতে চান তিনি। এবং তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, “মাননীয় জিপি, আপনার কাজ শুধু সরকারের পক্ষ নেওয়া নয়। নাগরিকদের স্বার্থও আপনাকে দেখতে হবে। মামলাকারী এক জন নাগরিক। আপনি মামলার বিষয়বস্তু দেখুন।”

এ দিকে শুনানির ফাঁকে আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় বিচারপতিকে জানান, তাপস-কাণ্ডে জনৈক বিপ্লব চৌধুরী এই আদালতেই আলাদা একটি মামলা করেছেন। তার নথি আদালতে জমা দিয়ে ওই আইনজীবী বলেন, তাপস পালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। শুনে জিপি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠে বলেন, “পুলিশের কাছে নালিশ করা হয়নি জানার পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করা হল! এটা ঠিক নয়।” বিচারপতি দত্ত অবশ্য জানান, ওই ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করেছেন ১ জুলাই। কিন্তু যে মামলার শুনানি চলছে, সেটি হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে ৩ জুলাই। “উনি মামলা দায়ের হওয়ার পরে প্রভাবিত হয়ে থানায় অভিযোগ জানাননি।” পর্যবেক্ষণ আদালতের।

বিচারপতি জানান, তাপসের মন্তব্য নিয়ে দু’টি মামলা তিনি একসঙ্গে শুনবেন। ফের শুনানি বুধবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন