পাতে ইলিশ ফেরাতে উঠেপড়ে লেগেছে রাজ্য

গঙ্গায় ইলিশের আনাগোনা কমছে ফি বছর। দূষণ জর্জরিত গঙ্গা ছেড়ে ইলিশের ঝাঁক এখান পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশ ঘুরে সুদূর মায়ানমারের ইরাবতীর দিকে। ফলে কমছে জোগান। চাহিদা মেটাতে ভরসা ছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশের বরিশাল বা ভোলার ইলিশ। কিন্তু আইনি বাধায় কয়েক বছর ধরে সেই আমদানিও বন্ধ। চোরা পথে বাংলাদেশ থেকে কিছু ইলিশ এলেও তার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

গঙ্গায় ইলিশের আনাগোনা কমছে ফি বছর। দূষণ জর্জরিত গঙ্গা ছেড়ে ইলিশের ঝাঁক এখান পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশ ঘুরে সুদূর মায়ানমারের ইরাবতীর দিকে। ফলে কমছে জোগান। চাহিদা মেটাতে ভরসা ছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশের বরিশাল বা ভোলার ইলিশ। কিন্তু আইনি বাধায় কয়েক বছর ধরে সেই আমদানিও বন্ধ। চোরা পথে বাংলাদেশ থেকে কিছু ইলিশ এলেও তার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তাই বাংলাদেশ সরকার যাতে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়সে জন্য কেন্দ্রের দ্বারস্থ হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আগামী ইলিশ মরসুমের আগেই যাতে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া যায়, সে জন্য তৎপর হয়েছেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। কেন্দ্রীয় কৃষি, বিদেশ ও বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মন্ত্রী।

Advertisement

গত এক-দেড় দশক ধরে গঙ্গা মোহনায় ইলিশের ঝাঁকে ভাটার টান। রাজ্যবাসীর রসনা তৃপ্তিতে ভরসা ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সে দেশের বাজারে ইলিশের দাম নাগালে রাখার যুক্তি তুলে ২০০৭ সালে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করলেও বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানির জন্য যে দাম বেঁধে দিয়েছেন, সেই দামে ইলিশ এনে পোষাতে পারছেন না এ বাংলার মাছ ব্যবসায়ীরা। তাই আমদানি একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

বাংলাদেশ যাতে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, সে জন্য বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে আবেদন জানিয়েছেন চন্দ্রনাথবাবু। আজ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধানাথ সিংহের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও একই দাবি জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই ওই নিষেধাজ্ঞা তুলতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুক কেন্দ্র।” বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠকে বসতে চলেছেন রাজ্যের মৎস্য দফতরের কর্তারা।

Advertisement

তবে বাংলাদেশ নির্ভরতা কাটিয়ে ইলিশের ঝাঁক গঙ্গায় ফিরিয়েআনতেও তৎপর হয়েছে মৎস্য দফতর। দফতরের বক্তব্য, গঙ্গার দূষণ, মোহনাগামী নদীগুলিতে মিঠে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া ও সর্বোপরি নির্বিচারে ছোট ইলিশ ধরায় গঙ্গা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির প্রিয়তমএই মাছ।

এই চিত্র বদলাতে মূলত দু’টি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, দূষণ কমাতে গঙ্গা তীরবর্তী সমস্ত পুরসভাগুলির বর্জ্য নিকাশিব্যবস্থা উন্নত করছে রাজ্য সরকার। দ্বিতীয়ত, ছোট ইলিশ ধরা ইতিমধ্যেই আইন করে বন্ধ করেছে রাজ্য সেই আইন কঠোর ভাবে বলবৎ করতে চায় তারা। কারণ, নির্বিচারে ছোট ইলিশ ধরায় কমছে প্রজননের হার। ইলিশ কমার সেটি একটি প্রধান কারণ। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ফি বছর প্রায় সাত থেকে নয় কোটি ছোট ইলিশ কেবল হুগলি নদীতেই ধরা হয়। তাই বাংলাদেশের ধাঁচে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝ থেকে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যেও ইলিশ ধরায় বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই আইন কঠোর ভাবে বলবৎ করে সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ।

পরিবেশ সংক্রান্ত সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেনশন অব নেচার’-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি রহমান শোয়েবের পর্যবেক্ষণ যে সময়ে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখছেন, সেই সময়ে তাদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়াটা সব থেকে জরুরি। না হলে চোরাগোপ্তা ইলিশ শিকার চলতেই থাকবে। বাংলাদেশ সরকার এই সময়ে জেলেদের জন্য রেশনে খাদ্যশস্য দেওয়া ছাড়া বিকল্প জীবিকারও ব্যবস্থা করেছেন।

রাজ্যের মৎস্য দফতরের কর্তারাও এই বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। একই সঙ্গে ছোট ইলিশ বাঁচাতে ৯০ মিলিমিটার কম আকারের জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গেও এই ওই মাস দেড়েক সময়ে জেলেদের রেশন দেওয়া শুরু করার কথা তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন