জামাইষষ্ঠীর পাতে কি অধরাই পদ্মার ইলিশ?

পদ্মার ইলিশ আনতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন এ রাজ্যের ইলিশ আমদানিকারীরা। জামাইষষ্ঠীতে পদ্মার সর্ষে ইলিশ বা ভাপা ইলিশ এ বারও জামাইদের পাতে জুটবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন আছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

আহা ইলিশ...। বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

পদ্মার ইলিশ আনতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন এ রাজ্যের ইলিশ আমদানিকারীরা।

Advertisement

জামাইষষ্ঠীতে পদ্মার সর্ষে ইলিশ বা ভাপা ইলিশ এ বারও জামাইদের পাতে জুটবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন আছে। শাশুড়িদের হয় তো মায়ানমারের ইলিশ দিয়েই জামাই বরণ করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের সরকার এ দেশে ইলিশ রফতানি বন্ধের উপরে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা এখনও চলছে। সে কারণে ইতিমধ্যেই আমদানিকারীরা মায়ানমার থেকে ইলিশ রাজ্যে এনে হিমঘরে রেখে দিয়েছেন। জামাইষষ্ঠীর আগেই বাজারে তা ছাড়া হবে। রাজ্যের ইলিশ আমদানিকারীদের অন্যতম সংস্থা হিলশার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘৫০ টনের মতো মায়ানমারের ইলিশ মজুত আছে। জামাইষষ্ঠীতে তা পাওয়া যাবে। পদ্মার মতো না হলেও তার স্বাদ খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না।’’

ব্যবসায়ীরা জানান, মায়ানমারের ওই ইলিশের পাইকারি মূল্য ওজন অনুযায়ী ঠিক করা হয়েছে। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের পাইকারি মূল্য ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মতো। ৭০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ইলিশের মুল্য ৭০০ টাকা কেজি। খোলা বাজারে অবশ্য যা সাধারণ মানুষকে কিনতে হবে আরও বেশি দাম দিয়ে।

Advertisement

কিন্তু জামাইষষ্ঠীর পরে যাতে দ্রুত পদ্মার ইলিশ এ রাজ্যে আসতে পারে সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ইলিশ আমদানিকারীরা আবেদন জানাবেন। তাঁদের আশা, ভোজন রসিক বাঙালির জন্য এ বার নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রী কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতি আমদানিকারীদের মনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছেন। তা ছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ২০ কেজি ইলিশ মাছ পাঠিয়েছেন। সে কারণেও তাঁদের আশা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও বিবেচনা করে দ্রুত তাঁদের সমস্যা সমাধান করবেন।

এক ইলিশ আমদানিকারীর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যের বাঙালিদের ইলিশ খাওয়ার স্বাদ তাঁরা পূরণ করবেনই।’’

২০১১ সালে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে রাজ্যে ইলিশ ঢুকেছিল মাত্র দেড়শো টন। মূলত ইলিশ আসে পদ্মা মেঘনা, মোহনা, ভোলা জেলার মনপুরা থেকে। ২০১২ সাল থেকে ও দেশের সরকার আভ্যন্তরীণ বাজারে ইলিশের চাহিদার কথা বলে এ দেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে আর এ দেশে বৈধ ভাবে ইলিশ আসেনি ঠিকই। কিন্তু চোরাপথে রাজ্যে পদ্মার ইলিশ ঢুকেছে। তবে সেগুলি বাজারে এত বেশি দামে বিক্রি হয়েছে, যে সকলের পক্ষে তা কিনে খাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে বাঙালিদের পাতে পদ্মার ইলিশ অধরাই থেকে গিয়েছে।

ইলিশ আমদানিকারীরা অতীতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে পদ্মার ইলিশ আনার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান আজও হয়নি।

অতুলবাবু বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ইলিশ পাঠিয়েছেন খুবই ভাল কথা। আমরা চাই এ দেশের আম জনতার জন্যও ও দেশের সরকার পদক্ষেপ করুক। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আমরা শীঘ্রই দাবি জানাতে চলেছি।’’

হিলশা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ জুন পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। তারপর যাতে ফের ইলিশ এ দেশে ঢুকতে পারে সে জন্য এখন মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আমদানিকারীরা। তিস্তা জলবণ্টন সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ রাজ্যে ইলিশ ঢোকার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন দু’ দেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বাংলাদেশে একটি কথা খুবই এখন প্রচলিত জল দাও, ইলিশ নাও।’’

সামনেই এ দেশে আসার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। সেখানে নিশ্চয়ই ইলিশ সমস্যা মিটবে বলে আশা করছেন আমদানিকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন