Irfan Habib

Irfan Habib: এখনও নিপীড়িত নিম্নবর্ণ: ইরফান

বর্তমান সময়েও নিম্নবর্ণ এবং দলিতদের উপরে বার বার হিন্দুত্ববাদী এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক শক্তিগুলির নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৩
Share:

ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। —ফাইল চিত্র।

ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় নানা সময়ে বদল এসেছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে বর্ণ-জাতি ব্যবস্থার সমীকরণও। তা সত্ত্বেও নিম্নবর্ণের ক্ষেত্রে নিপীড়নের বদল হয়নি বলেই মনে করেন ইতিহাসবিদ
ইরফান হাবিব।

Advertisement

শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ওয়েবিনারে ভারতের জাতপাত সংক্রান্ত ইতিহাসের আলোচনা করতে গিয়ে কার্যত এই সুরই শোনা যায় তাঁর কণ্ঠে। প্রায় তিন হাজার বছরের ইতিহাসের তথ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেন, কী ভাবে বর্ণ এবং জাতি ব্যবস্থার কাঠামো বদলেছে। এই বদল সত্ত্বেও বিংশ শতকেও যে অস্পৃশ্যতার ‘বিষ’ রয়ে গিয়েছিল এবং সেই কুসংস্কার দূর করতে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী কী ভাবে এগিয়েছিলেন, তাও উঠে এসেছে এই প্রবী ইতিহাসবিদের কণ্ঠে।

বর্তমান সময়েও নিম্নবর্ণ এবং দলিতদের উপরে বার বার হিন্দুত্ববাদী এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক শক্তিগুলির নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রসঙ্গে অনেকেই মনে করছেন, ব্রাহ্মণ্যবাদী আদর্শের মধ্যে প্রোথিত থাকা বর্ণ-জাতিভিত্তিক নিপীড়নের শিকড় কার্যত তুলে ধরতে চেয়েছেন ইরফান।

Advertisement

প্রাচীন ভারতে সমাজকে চারটি বর্ণে বিভক্ত করা হত। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য — প্রথম তিনটি বর্ণকে দ্বিজ (দ্বিজ বলা হত কারণ অধ্যয়ন শেষে উপনয়নের অধিকার প্রথম তিন বর্ণের থাকলেও শূদ্রদের শিক্ষা এবং উপনয়নের অধিকার থাকত না) বলা হলেও চতুর্থ বর্ণ শূদ্র সেই তকমা পায়নি। পরবর্তী কালে চণ্ডাল-সহ কিছু গোষ্ঠীর উল্লেখ মেলে ‘অস্পৃশ্য’ হিসেবে। তাদের অন্ত্যজ হিসেবেই গণ্য করা হত এবং ইতিহাসবিদদের অনেকেরই মতে, ব্রাহ্মণ্য সমাজ কাঠামোয় শূদ্রেরা অন্তর্ভুক্ত হলেও ‘অস্পৃশ্য’দের তার আওতায় আনা হয়নি। বস্তুত, ধর্মশাস্ত্র নির্ধারিত পেশা অনুযায়ী, প্রথম তিন বর্ণের সেবা এবং কৃষিকাজই ছিল শূদ্রের পেশা। ফলত রামশরণ শর্মার মতো অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন, প্রাচীন ভারতের কৃষি অর্থনীতিতে শ্রমিকের জোগান দিতে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীগুলিকে শূদ্রের তকমা দেওয়া হত। এ দিন ইরফানের বক্তব্যে সেই প্রসঙ্গ যেমন এসেছে, তেমনই মধ্যযুগে অল-বিরুনির লেখায় কী ভাবে ভারতের বর্ণ-জাতিভিত্তিক সমাজকে দেখা হয়েছে তারও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এ দিন ইরফান জানান, ব্রিটিশদের এ দেশের আগমনের সময়েও জমির মালিকানা ছিল উচ্চ বর্ণের হাতেই এবং সেই জমিদার শ্রেণি নিজস্বার্থেই ব্রিটিশদের অনুগত হয়। গাঁধীও প্রথম জীবনে বর্ণভিত্তিক সমাজকে আদর্শ পেশার উৎস বলে মনে করতেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে তিনি অস্পৃশ্যতার প্রভাব লক্ষ্য করেন এবং তা দূর করতে হরিজনদের নিয়ে সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনও শুরু করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন