শরীরের নিম্নাংশ সম্পূর্ণ অসাড়। পুরোটাই ব্যান্ডেজ বাঁধা। যৌনাঙ্গের ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষছে না কেউ।
বছরখানেক আগে দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ফোন পেয়ে সেখানে পৌঁছে আয়েশাকে (নাম পরিবর্তিত) এই অবস্থাতেই পেয়েছিল একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গণধর্ষণের শিকার সেই আয়েশা বছর পেরিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখন সে চায় নতুন করে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে।
ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা, দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশাকে ২০১৪-র শেষ দিকে পাচার করে দেওয়া হয়। দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে গণধর্ষণের শিকার হয় সে। ২০১৫-র ৮ ডিসেম্বর রাতে তেগবাহাদুর হাসপাতাল থেকে ফোন আসে আয়েশার বাড়িতে। ফোনে তার চেহারার বিবরণ দিয়ে বলা হয়, তার সন্ধান মিলেছে। বাড়ির লোকজন, বিশেষ করে আয়েশার মা যেন তাড়াতাড়ি ওই হাসপাতালে পৌঁছে যান। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, আয়েশার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ এবং সে এইচআইভি-আক্রান্ত। অভিযোগ ওঠে, রোগের কথা জানার পরে চিকিৎসক-নার্সেরা প্রথমে তার চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষা করতে চাননি। তবে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল ওই কিশোরীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় চিকিৎসকেরা আর কোনও রকম অবহেলা করার সুযোগ পাননি।
তার পরে চলে আয়েশাকে সুস্থ করার লড়াই। মাসখানেকের মধ্যে সেই লড়াইয়ে কিছুটা সফল হন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন, ওই বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং হাসপাতালে আয়েশার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারেরা। সফল আয়েশা নিজেও। তবে সুস্থ হলেও নিয়মিত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতে হয় তাকে। পরীক্ষা করাতে হয় রক্ত।
আয়েশার পরিবার সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে আনার পরে প্রথমে এসএসকেএমে দীর্ঘদিন ভর্তি থাকতে হয়েছিল তাকে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে বাড়ি ফেরার অনুমতি মেলে। তবে রক্তপরীক্ষা এবং চিকিৎসককে দেখানোর জন্য মাসে দু’বার বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু ডায়মন্ড হারবার থেকে বাঙুর হাসপাতালে আসতে অসুবিধা অনেক। তাই এখন ডায়মন্ড হারবার সদর হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা।
চিকিৎসকেরা জানান, অন্যান্য শারীরিক সমস্যা মোটামুটি মিটলেও এইচআইভি পজিটিভ হওয়ায় খুব সাবধানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আয়েশাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। সর্দি, কাশি বা জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে বলা হয়েছে, যাতে নতুন কোনও রকম সংক্রমণ না-হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে থেকে আয়েশার হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতায় ফেরার পরে সিআইডি-র মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা এবং বিপিএল কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসকের কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণ মেলে, যাতে আয়েশার চিকিৎসা, খাওয়াদাওয়ার কোনও অসুবিধা না-হয়। চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্যও মিলেছে।
পারিবারিক সূত্রের খবর, দিনের পর দিন ধর্ষণের ‘ট্রমা’-ও অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে আয়েশা। তাই নতুন করে প়ড়াশোনা করতে চায় সে। সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার এবং তার দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছে মেয়েটি। ‘‘আল্লার দয়ায় মেয়েকে ফিরে পেয়েছি। এখন ও অনেকটা সুস্থ। পড়তে চাইছে। আমরাও চাই, আয়েশা আবার পড়াশোনা করুক,’’ বললেন মা।