খড়্গপুরের খেমাশুলিতে আটকে লোকাল ও দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি ট্রেন।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে হুল উৎসব পালনের মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় শুক্রবার রেল ও সড়ক অবরোধ করছেন কয়েক হাজার আদিবাসী। ঝাড়খণ্ডে একটি জমি আইনকে কেন্দ্র করে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল-এর ডাকে এই অবরোধ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর জেরে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন আটকে পড়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি, বেলপাহাড়ি, শিলদায় হুল দিবস উপলক্ষে শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপী উত্সবের আয়োজন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। আর এ দিন থেকেই এই সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করে বিভিন্ন জায়গায় ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল-এর ডাকে রেল ও সড়ক অবরোধ করেছেন কয়েক হাজার আদিবাসী। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে রেল ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এর জেরে বেলদার নেকুড়সিনি ও খড়্গপুরের খেমাশুলিতে আটকে লোকাল ও দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি ট্রেন। খেমাশুলিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করেছেন আদিবাসীরা। খেমাশুলিতে এই অবরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই সংগঠনের প্রধান (দিশম পারগানা) নিত্যানন্দ হেমব্রম। তবে শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে অবরোধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অ্যাম্বুল্যান্স এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে অবরোধকারীদের জন্য।
এরই পাশাপাশি রেল ও রাস্তা অবরোধ হয়েছে পুরুলিয়াতেও। মধুকুণ্ডা ও গড়ধ্রুবেশ্বর স্টেশনে শুরু হয়েছে রেল অবরোধ। এর জেরে আদ্রা স্টেশনে আটকে রয়েছে বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন। রেল সূত্রে খবর, অবরোধ কর্মসূচির জেরে কয়েকটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাপথও।
আরও পড়ুন: রাতভর তান্ডব পাহাড়ে, আগুন-বোমাবাজি, মিরিকে জখম তৃণমূল নেতা
আদিবাসীদের ঐতিহ্যের হুল দিবস উপলক্ষে যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার উত্সবের আয়োজন করেছে তখন কেন উত্সব বয়কট করে রেল ও সড়ক অবরোধের পথে হাঁটলেন হাজার হাজার আদিবাসী?
এই আন্দোলনের উত্সস্থল ঝাড়খণ্ড। এখানে একটি জমি আইনকে কেন্দ্র করেই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সেই জমি আইন, ছোটনাগপুর টেনেন্সিয়াল অ্যাক্ট অনুযায়ী আদিবাসীদের জমি শুধুমাত্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেই কেনাবেচা হতে পারে। সম্প্রতি এর পরিবর্তে নয়া আইন আনতে চলেছে ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকার। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী যে কেউ আদিবাসীদের জমি কিনতে পারবেন। এরই প্রতিবাদে হুল দিবসেই আন্দোলনের ডাক দেয় ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। ঝাড়খণ্ড ছাড়াও বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে পালিত হচ্ছে তাদের অবরোধ কর্মসূচি।
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল-এর অবরোধ।
তবে পশ্চিমবঙ্গে এই অবরোধ কর্মসূচির পেছনে অন্য একটি কারণ প্রাধান্য পেয়েছে। ১৮৫৫ সালের এই দিনটিতে সিদো ও কানহুর নেতৃত্বে হাজার হাজার সাঁওতাল শহিদের আত্মবলিদানকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ৩০ জুন হুল দিবস পালন করেন হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ। রাজ্য সরকারের এই বিনোদনমূলক উত্সব আসলে সেই ভাবাবেগকে আঘাত করেছে। দিন চারেক আগে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় এই মর্মেই পোস্টার সাঁটানো হয়। শুধু তাই নয়, পুনর্বাসন পাওয়া প্রাক্তন মাওবাদীদের হুল দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান নিয়েও আপত্তি তুলেছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। সংগঠনের মুখপাত্র রবিন টুডু বলেন, ‘‘যে মাওবাদীরা নির্বাচারে এলাকায় খুন সন্ত্রাস করেছিল, তারা হুল দিবসের অনুষ্ঠানে নাচগান করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
আজ বিকেলে শিলদায় রাজ্যস্তরের হুল দিবসের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী জেমস কুজুর। তাই বিক্ষোভ, অবরোধের আবহে শিলদা, লালগড় ও বেলপাহাড়িতেও হুল দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান ঘিরে কড়া নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে।
— নিজস্ব চিত্র।