বর্ধমান তৃণমূলে রদবদল

খোঁজ মেলে না নেতাদের! ক্ষুব্ধ অরূপ

সাফল্যেও কাঁটা হয়ে বিঁধছে দলের কোন্দল। একটা ঝাঁকুনি দরকার ছিল। রবিবার বর্ধমান জেলার সংগঠনে সেই ঝাঁকুনিই দিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব!

Advertisement

সুব্রত সীট ও সৌমেন দত্ত

দুর্গাপুর ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

দুর্গাপুরে অরূপ বিশ্বাস ও স্বপন দেবনাথ। রবিবার বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।

সাফল্যেও কাঁটা হয়ে বিঁধছে দলের কোন্দল। একটা ঝাঁকুনি দরকার ছিল। রবিবার বর্ধমান জেলার সংগঠনে সেই ঝাঁকুনিই দিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব!

Advertisement

রাজ্যের সবচেয়ে বড় জেলায় ২৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৯টিতে জিতেও দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে তিনি যে অসন্তুষ্ট, গত ২৫ মে কলকাতায় দলের বৈঠকেই তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রাস্তা ধরেই রবিবার জেলায় দু’টি বৈঠক করে সংগঠনে নানা ভাঙাগড়ার নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের বর্ধমানের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। দুর্গাপুরে দু’টি আসনেই হারের জেরে যেমন সব স্তরের কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ হল, তেমনই কোন্দলে রাশ টানতে গ্রামীণ এলাকার সংগঠন ভাগ করা হল। এ দিনই বীরভূমে অন্তর্ঘাতের অভিযোগে জেলা কমিটির দুই সদস্য-সহ তিন নেতাকে বহিষ্কার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

বস্তুত, এ বার ভোটে বিপুল জয়ের পরেই দলের অন্দরের দ্বন্দ্বে রাশ টানাই যে তাঁর লক্ষ্য, ফল বেরনোর পরে প্রথম সাংগঠনিক বৈঠকেই তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়কেও বার্তা দিতে শোনা গিয়েছে, যে গাছের ফল খাবে, তার গোড়া কেটে ফেলার চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। সেই মতো সাংগঠনিক রদবদলের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক জেলায়। নির্বাচনে ভাল ফল করেও দলনেত্রীর কড়া ব্যবস্থা থেকে ছাড় পেল না বর্ধমান জেলা তৃণমূল। এ দিন দুপুরে দুর্গাপুরে ছিল ক্রীড়া ও পূর্তমন্ত্রী অরূপবাবুর প্রথম বৈঠক। তিনি যে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন, তা বোঝা যায় সভার গোড়াতেই। দলের নাম করে দুর্গাপুর শহরের কাউন্সিলর ও নেতাদের একাংশের ‘আখের গোছানো’ নিয়ে সরব হন তিনি। নাম ধরে বলে দেন, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ভাবে কাদের সম্পত্তি বেড়েছে। যা দেখে তাজ্জব জেলার নেতারা।

Advertisement

এ বার দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম, দু’টি কেন্দ্রেই বাম-কংগ্রেস জোটের হাতে পর্যুদস্ত হয়েছে শাসকদল। দুর্গাপুর পুরনিগম এলাকায় ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টিতেই জোটের থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় হেরেছেন প্রায় ৪৪ হাজার ভোটে। অথচ, বছর ঘুরলেই এই শহরে পুরভোট। সে দিকে নজর রেখেই দল ও দলের শ্রমিক সংগঠনের সমস্ত কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন অরূপবাবু। দলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়কে সামনে রেখে এক মাসের মধ্যে সব কমিটি নতুন করে গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, জেলায় দলের সংগঠন যেমন গ্রামীণ, দুর্গাপুর ও আসানসোল— তিন ভাগে বিভক্ত, শ্রমিক সংগঠনের কাঠামোও সে ভাবে গড়ার কথা জানান তিনি। অরূপবাবু বলেন, ‘‘এখানে শুনছি, নেতাদের মানুষ খুঁজে পায় না! দল সব নজরে রেখেছে। সবাইকে সতর্ক করছি।’’

গ্রামীণ বর্ধমানে ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে জিতেছে তৃণমূল। বেশ কয়েক দশক ধরে বামেদের হাতে থাকা আউশগ্রাম, মন্তেশ্বর, রায়নার মতো আসন এ বার তাদের হাতে এসেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভোটের সময়ে দলের বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের হারাতে ‘সক্রিয়তা’র অভিযোগ ওঠে জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে। তাতে ক্ষুন্ন মমতা কলকাতার বৈঠকে তাঁকে সতর্কও করেছিলেন এই বলে যে, ‘শুধু নিজে জিতব, অন্যকে হারানোর চেষ্টা করব’, তা মানা হবে না। দলের একাংশের মতে, এ দিন গ্রামীণ এলাকার সংগঠন যে ভাবে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে পরিষ্কার, স্বপনবাবুকে পদ থেকে সরানো না হলেও তাঁর ক্ষমতা খর্ব করল দল। যদিও অরূপবাবু ‘ক্ষমতা ছাঁটাইয়ের’ কথা মানতে চাননি।

১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে আগে থেকেই তিনটির দায়িত্বে রয়েছেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বাকি ১৩টি কেন্দ্রের দায়িত্ব চার জনকে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অরূপবাবু।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে উঠে এসেছে অন্তর্ঘাতের প্রসঙ্গও। জামালপুর ও পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে হারের পিছনে ‘অন্তর্ঘাত’ রয়েছে বলে দলের একাংশের দাবি। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেন, তাঁকে বেশ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে লড়তে হয়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা রবীন্দ্রনাথবাবু যেমন হাজার খানেক ভোটে জিতেছেন, তেমনই মাত্র ৪৪৮ ভোটে রায়না এবং ৭০৬ ভোটে মন্তেশ্বর কেন্দ্র জিতেছে তৃণমূল। দলীয় কোন্দলের জেরে ‘অন্তর্ঘাত’ না হলে এই ব্যবধান অনেকটাই বাড়ত বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা।

অরূপবাবু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কমিটি তৈরি করেছেন। তাতে আমি রয়েছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে রিপোর্ট, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ তলছে। অন্তর্ঘাতের প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ স্বপনবাবুর সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন