যে হোটেলে উঠলাম, তার কর্মীরাই দাঁড়িয়ে রাস্তায়

বিমানটা নীচে নামার নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আকাশের উপরে চক্কর কাটছিল বেশ কিছু ক্ষণ ধরে। ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ যখন কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে নামলাম তখন সেখানে ভয়াবহ অবস্থা। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কর্মীরা নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে নীচে নেমে এসেছেন। চারিদিকে দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। চারপাশে বিমানকর্মী ও যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড়।

Advertisement

সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

অভিজ্ঞতার বিবরণ দিচ্ছেন সুব্রতবাবু। ছবি: নারায়ণ দে।

বিমানটা নীচে নামার নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আকাশের উপরে চক্কর কাটছিল বেশ কিছু ক্ষণ ধরে। ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ যখন কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে নামলাম তখন সেখানে ভয়াবহ অবস্থা। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কর্মীরা নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে নীচে নেমে এসেছেন। চারিদিকে দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। চারপাশে বিমানকর্মী ও যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড়।

Advertisement

গত ২৪ এপ্রিল স্ত্রী ও পরিজনদের নিয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে নেপাল ভ্রমণে গিয়েছিলাম। ২৪ এপ্রিল রাতে কাঁকড়ভিটায় থেকে ২৫ এপ্রিল সকাল ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ ভদ্রপুর থেকে বিমানে কাঠমাণ্ডু রওনা দিই। ওই অবস্থায় কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দর থেকে বাইরে বের হই স্ত্রী চিত্রা ও আত্মীয়দের নিয়ে। বেরিয়ে দেখি রাস্তায় গাড়ি থাকলেও চালক নেই। সাইরেন বাজিয়ে আহতদের নিয়ে ছুটছে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। চারিদিকে হুড়োহুড়ি। হেঁটেই হোটেলের খোঁজ শুরু করলাম। অনেক কষ্টে যে হোটেলটিতে উঠি, ভুমিকম্পে তার দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ওই হোটেলটি অন্য হোটেলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত বলে মনে হয়েছিল সেই সময়। তবে আতঙ্কে সেখানকার কর্মীরা সকলেই তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ।

দুপুরে কোনও খাবার না পেয়ে পাঁউরুটি খেয়েছিলাম। আমাদের গন্তব্য ছিল কাঠমাণ্ডু থেকে পোখরা হয়ে মুক্তিনাথ। কিন্তু বিমান বাতিল বলে জানতে পারি। ভুমিকম্পের জেরে আমরাও ভয়ে হোটেলের ঘর ছেড়ে বাইরে চলে আসছিলাম বার বার। চারিদিকে শুধু আতঙ্ক। কারও ঘর ভেঙেছে, কেউ ভুমিকম্পে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। বারবার ভুমিকম্পের জেরে শিশুরাও আতঙ্কিত। কেউ মাকে জড়িয়ে রাস্তায় কাঁদছে কেউ দুচোখে ভয় নিয়ে চুপ করে বসে রয়েছে।

Advertisement

এর মধ্যে আমাদের কুশল জানতে বারবার বাড়ি থেকে ফোন আসছিল। কাঁকরভিটা থেকে নেপালের একটি সিমকার্ড ‘এন সেল’ নিয়েছিলাম। তা দিয়েই আলিপুরদুয়ার বাড়িতে ছেলে সৌরভ , সুরজিৎ বৌমা ডালিয়া ও রিয়া ও নাতনি অহনা ও সুহানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ২৬ এপ্রিল ভোর পর্যন্ত ষাট বারের বেশি ভূমিকম্প হয়। রাতে বিদুৎ ছিল না এলাকায়। ২৬ এপ্রিল সকালে ফেরার জন্য বিমানবন্দরে গিয়ে দেখি বিমান ওঠা নামা বন্ধ। এয়ারপোর্টের লনে বিদেশি পর্যটকরা তাঁবু খাটিয়ে বসে রয়েছে। কোনও মতে একটি ছোট গাড়ির চালককে রাজি করিয়ে সকাল আটটা নাগাদ কাঁকড়ভিটার উদ্দেশে রওনা দিই।

চারিদিকে রাস্তায় ফাটল। শুধু তাই নয়। পেট্রেল পাম্পগুলিতেও লোকজনের দেখা মিল ছিল না। গাড়ির চালক কোনও মতে জ্বালানী জোগার করে ১৩ ঘন্টার পথ পেরিয়ে রাতে কাঁকড়ভিটায় পৌঁছে দেয়। রাতে কাঁকড়ভিটায় থেকে সোমবার সকালে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি ধরি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসেছি। এখনও সব কিছু দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। তা কখনও ভুলতে পারব না।

(সুব্রতবাবু আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা আইনজীবী। কাঠমান্ডু বেড়াতে গিয়ে ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন