দোষীদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানও। —নিজস্ব চিত্র।
হুগলির তৃণমূল কর্মী ক্ষুদিরাম হেমব্রম খুনে দোষী আট সিপিএম কর্মীকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল চুঁচুড়া আদালত। ১৫ বছর পুরনো ওই খুনের মামলায় মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা শাস্তি ঘোষণা করেছেন।
২০১০ সালের ১৮ মার্চ ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন খুন হন ক্ষুদিরাম। সে দিন মাঠে চাষের কাজ সেরে তপন রুইদাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই তৃণমূল কর্মী। তারপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। পরের দিন অর্থাৎ, ১৯ মার্চ ডিভিসির ক্যানেল থেকে তাঁর বস্তাবন্দি রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠে রাজনৈতিক কারণে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ১৯ মার্চ রাতেই গুড়াপ থানায় খুনের অভিযোগে মামলা করেন মৃতের বন্ধু তপন।
তদন্তে নেমে সিপিএমের ১০ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট, অস্ত্র হাতে অপরাধ-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়। ঘটনাক্রমে চুঁচুড়া আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। মোট ১২ জন সাক্ষী দেন এই মামলায়। ঘটনায় চার জন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তবে বিচারপর্ব চলার সময়ই দুই অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর আট জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। মঙ্গলবার গুড়বাড়ি-১ পঞ্চায়েতের তৎকালীন প্রধান লালু হাঁসদা-সহ সিপিএম কর্মী রবি বাস্কে, লক্ষ্মীরাম বাস্কে, সিদ্ধেশ্বর মালিক, সনাতন মালিক, গণেশ মালিক, লক্ষ্মীনারায়ন সোরেন এবং নাড়ু টুডুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এই ঘটনায় অমর রুইদাস এবং নেপাল মালিক নামে আরও দুই কর্মী অভিযুক্ত ছিলেন, যাঁরা বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন মারা যান। সরকারি আইনজীবী চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেছেন। অনাদায়ে আরও এক বছর জেলের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। নৃশংস ভাবে ক্ষুদিরামকে খুন করা হয়েছিল।’’
হুগলি জেলা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রায় ১৫ বছর সময় লেগে গেল এই মামলার রায়দান হতে। তবে এ জন্য সরকারি আইনজীবী বা আদালত কেউই দায়ী নয়। মামলা চলাকালীন আসামিরা পালিয়ে গিয়েছিল। তাদের ধরা এবং তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করে পুলিশ চার্জশিট দেয়। তার পর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এই খুনে যে নৃশংসতা ছিল, সেই কারণেই আদালত আট জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজা শুনিয়েছে।’’ ক্ষুদিরামের স্ত্রী মালতি হেমব্রম অবশ্য খুশি নন। তিনি বলেন, ‘‘ফাঁসি হলে ভাল হত। আমার স্বামী তো চলে গেল। ছেলেমেয়েরা তখন ছোট ছিল। তাদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি।’’
সাজা ঘোষণার পর ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্রের বক্তব্য, ধনেখালিতে সিপিএম অনেক তৃণমূল কর্মীকে খুন করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘২০১১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর ওই পরিবারগুলোকে বিচার দেওয়ার চেষ্টা করছি। ক্ষুদিরামকে তপন রুইদাসের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সামনে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা সেই রক্ত বাড়ির মহিলাদের দিয়ে মুছতে বাধ্য করা হয়। মৃতদেহ লোপাট করে টেনে নিয়ে গিয়ে ডিভিসির খালে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এবং এই ঘটনা যারা প্রত্যক্ষদর্শী তাদের হুমকি দেওয়া হয়। আদালত সঠিক বিচার করেছে।’’
আদালত থেকে বেরোনোর সময় আসামিরা জানিয়েছেন , তাঁরা সিপিএম করেন বলে ফাঁসানো হয়েছে।