blind

Blind Couple: নেই চোখের আলো, হাতের ছোঁয়ায় মনের আলো জ্বালাচ্ছেন দৃষ্টিহীন দম্পতি

অমিতের মতোই জন্মান্ধ তাঁর স্ত্রী শাহিনাও। দু’জনের পরিচয় বেহালার ব্লাইন্ড স্কুলে। সেখান থেকেই সম্পর্কের সূত্রপাত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:৪৩
Share:

অমিত ও শাহিনা। নিজস্ব চিত্র

আলো নেই। আবার আলো আছেও। চোখের আলো না থাকলেও মনের আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন হুগলির চুঁচুড়ার শিক্ষক অমিত দে এবং তাঁর স্ত্রী শাহিনা খাতুন।

Advertisement

চুঁচুড়া বাবুগঞ্জের বাসিন্দা অমিত জন্মান্ধ। ছোটবেলাতেই ভর্তি হয়েছিলেন বেহালার ব্লাইন্ড স্কুলে। হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতেন। মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন প্রথম বিভাগে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর আচমকা মারা যান তাঁর বাবা। তবে পড়াশোনায় ছেদ পড়েনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলেই কখনও জুতোর দোকানে কাজ করেছেন। কখনও কাজ জুটিয়েছেন কোনও বেসরকারি সংস্থায়, আবার ট্রেনে-বাসে হকারিও করেছেন। তার ফাঁকেই চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিনি। ২০১১ সালে পাণ্ডুয়ার গোপালনগর প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছেন অমিত।

অমিতের মতোই জন্মান্ধ তাঁর স্ত্রী শাহিনাও। দু’জনের পরিচয় বেহালার ব্লাইন্ড স্কুলে। সেখান থেকেই সম্পর্কের সূত্রপাত। সে দিনের কথা জানতে চাইতেই স্মৃতির সরণি বেয়ে পুরনো দিনে চলে গেলেন শাহিনা। বললেন, ‘‘ আমরা বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। সেখানেই আমাদের দু’জনের পরিচয়। তার পর প্রেম। তবে দু’জনে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করব না, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ এখন নৈহাটির মহেন্দ্র প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা শাহিনা।

Advertisement

করোনা পর্বের আগে নিয়মিত ট্রেনে করে রোজ স্কুলে যেতেন অমিত এবং শাহিনা। কিন্তু করোনা পর্বে সেই অভ্যাসে ছেদ পড়েছে। বদলে গড়ে তুলতে হয়েছে নতুন রেওয়াজ। ব্রেইল লিপিতে লেখা বইয়ের মাধ্যমে আগে নিজে পড়াশোনা করে ছাত্রদের পড়াতেন ওই শিক্ষক দম্পতি। কিন্তু এখন তাঁদের পড়াতে হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে, অনলাইনে। সেই পাহাড়ও টপকে গিয়েছেন অমিত-শাহিনা। সেই কৌশল জানালেন অমিত। বললেন, ‘‘প্রথমে এক জন রিডারকে দিয়ে প্রশ্ন লিখিয়ে নিই। তার পর ফোনে ছবি তুলে ছাত্রছাত্রীদের পাঠিয়ে দিই। পরে উত্তরপত্রগুলি সংগ্রহ করে রিডারকে দিয়ে দেখিয়ে নম্বর দিই। এ ভাবেই লকডাউনে স্কুলের পড়াশোনা চালাচ্ছি। আগে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার জানতাম না। এখন জানি।’’ অমিত আরও বলছেন, ‘‘আমার সহকর্মীরা আমাকে সাহায্য করেছেন অনেক। রাস্তাঘাটে প্রতিটি মানুষ সাহায্য না করলে আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না।’’

এই দম্পতির একমাত্র পুত্রসন্তান সম্বিত এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। শিশুদের মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহ জাগাতে শিশুমনের কাছাকাছি পৌঁছনোর কথাই বলছেন শাহিনা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আমরা যেন চিরকাল শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারি। তবে তাতে চক্ষুষ্মানদের সাহায্য লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন