‘দাদা’র প্রতি অভিমান প্রকাশ ভিডিয়ো-বার্তায়
TMC

আত্মসমর্পণ করতে চান তৃণমূল নেতা সোনা

তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, সোনা ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ০৭:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

পেরিয়ে গিয়েছে চার দিনেরও বেশি সময়। শনিবার বিকেল পর্যন্ত বাঁশবেড়িয়ার পুর-প্রশাসক আদিত্য নিয়োগীকে গুলি করে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা সত্যরঞ্জন ওরফে সোনা শীলকে পুলিশ ধরতে পারেনি। তবে, শুক্রবার রাতে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি দু’এক দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োর অবশ্য বেশির ভাগটা জুড়ে রয়েছে ‘দাদা’র প্রতি সোনার অভিমান। কী ভাবে ‘দাদা’র কথায় তিনি কাজ করেছেন, তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক— এমন অনেক কথাই তাতে বলেছেন সোনা। ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘দাদা’ ভুল বোঝাতেই তাঁর এই পরিস্থিতি। একই সঙ্গে দাবিও করেছেন, তিনি কোনও অপরাধ করেননি। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

ওই ‘দাদা’ কে, সোনা দলের কোনও নেতার কথা বলতে চেয়েছেন কিনা, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে এলাকায়। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সোনার কথায় আমল দিচ্ছেন না। সপ্তগ্রামের (বাঁশবেড়িয়া এই বিধানসভা কেন্দ্রেই পড়ে) তৃণমূল বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছু বলব না। আদিত্যকে গুলি করার বিচারের জন্য পুলিশকে বলেছি। আইন আইনের পথে চলবে।’’ সোনার সঙ্গে শনিবারও চেষ্টা করে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।

Advertisement

ভিডিয়োয় সোনা বলেছেন, ‘‘যাঁকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করি, ভালবাসি, সেই মানুষটা আমাকে ভুল বুঝবে, ভাবতে পারিনি। তাঁকে আমার পেটের সমস্ত কথা বলেছি। যে কথা কাউকে বলতে নেই, তা-ও বলতাম। সে হাসলে আমি খুব খুশি হতাম।’’ ‘দাদা’ কী কারণে তাঁকে ভুল বুঝলেন, তা তাঁর অজানা বলেও ভিডিয়োয় দাবি করেছেন সোনা।

তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, সোনা ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু ভিডিয়ো-বার্তায় সোনার দাবি, চুঁচুড়া, সপ্তগ্রাম, বলাগড় এবং পান্ডুয়ায় ভোটের আগের দিন পর্যন্ত তিনি কী করেছেন, ঈশ্বর আর ‘সে’ (সম্ভবত সেই দাদা) জানে। তাঁর সংযোজন, ‘‘সে আমাকে একটা কথাই বলেছে— ভাই, আমার ইজ্জতটা শুধু তুই রাখ। তুই যা বলবি, আমি তাই করব। আমি জানি, মানুষটা মুখ দিয়ে যেটা বলে, সেটা করে। ওর কথার অনেক দাম। আমি নির্বিঘ্নে করেছি।’’

এর পরেই সোনার অভিযোগ, তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট, পোষ্যদের মারধর করা হয়েছে। ভিডিয়োতে আরও দাবি করেছেন, তিনি দলবিরোধী কাজ করে থাকলে দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যেন তদন্ত করেন। অপরাধী হলে যে কোনও শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও তিনি মাথা পেতে নেবেন।

সোনার বক্তব্য প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা বাঁশবেড়িয়ার বিদায়ী কাউন্সিলর অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘বিধায়ক থেকে শুরু করে অনেককেই সোনা দাদা বলে ডাকতেন। গত নভেম্বরে দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব ওঁকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। সোনা তৃণমূলের কেউ নন।’’

অমিত সোনাকে দলের কেউ বলে মানতে না চাইলেও ভোটের আগে ডানলপে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আয়োজনে অবশ্য সোনাকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। দলের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তাঁর ‘সখ্যতা’ প্রকাশ্যেই ধরা পড়েছিল। সোনার বিরুদ্ধে অবশ্য শুধু ওই খুনের চেষ্টার অভিযোগই নয়, একাধিক প্রতারণার অভিযোগও জমা পড়েছে থানায়। পুলিশের দাবি, সোনা পলাতক। খোঁজ চলছে।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময় থেকেই বাঁশবেড়িয়ায় তৃণমূলের রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান হয় সোনার। আরপিএফ কনস্টেবল সোনা বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর স্ত্রী অরিজিতা শীল বাঁশবেড়িয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান। ২০১৫ সালে ভোটে জিতে পুরসভার সর্বোচ্চ পদপ্রাপ্তি। এ সব কিছুর পিছনে সোনার ‘দাদা’র ভূমিকা ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন ঘুরছে গঙ্গাপাড়ের শহরে। তবে, আদিত্যকে খুনের চেষ্টা হওয়ার পরে অরিজিতাকে পুরপ্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। দায়িত্ব দেওয়া হয় আদিত্যকেই। তিনি অবশ্য
এখনও চিকিৎসাধীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন