Chandannagar

Chandannagar Khalisani Vidyamandir: করোনাকালে ‘স্কুল’ই হাজির পড়ুয়ার কাছে

চন্দননগরে রেললাইনের পশ্চিম দিকের এই এলাকা কার্যত গ্রামীণ অর্থনীতির উপরে দাঁড়িয়ে। অনেকে চাষবাস করেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চন্দননগর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৮:১৩
Share:

মনোযোগ: শিবিরে চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে যেতে পারছে না পড়ুয়ারা। তাই ‘স্কুল’ই পৌঁছে যাচ্ছে পড়ুয়াদের কাছে।

Advertisement

পাড়ার দুর্গামণ্ডপে, কারও বাড়ির চাতালে, কোনও ক্লাবে বা বৃদ্ধাশ্রমে চলছে ক্লাস। গত দু’সপ্তাহ ধরে এ ভাবেই চন্দননগরের খলিসানি বিদ্যামন্দিরের উদ্যোগে চলছে ভ্রাম্যমাণ শিক্ষা শিবির। শুরুটা হচ্ছে স্কুলের মতোই প্রার্থনা দিয়ে। তবে, স্কুলের ধরাবাঁধা রুটিন না হলেও করোনাকালে কার্যত ভুলতে বসা ক্লাসের অভ্যাসে ফিরছে ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক শুভায়ন মিত্র বলেন, ‘‘যত দিন স্কুল না খুলছে, এলাকার ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে শিক্ষা শিবির চালাতে চাই। যে কোনও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্বাগত।’’

চন্দননগরে রেললাইনের পশ্চিম দিকের এই এলাকা কার্যত গ্রামীণ অর্থনীতির উপরে দাঁড়িয়ে। অনেকে চাষবাস করেন। অনেক পড়ুয়াই গরিব পরিবারের। বহু ছাত্রছাত্রী গত দেড় বছরে স্কুলমুখো হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকের বাবা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্মার্টফোন না-থাকায় অসংখ্য ছেলেমেয়ে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্কুল বন্ধের কারণে বহু ছেলেমেয়ের পড়ার অভ্যাসই কার্যত চলে গিয়েছে। অসচ্ছল অনেক পরিবারে ছেলেদের ছোটখাটো কাজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন বাবা-মা। কাউকে গৃহশিক্ষক ছাড়তে হয়েছে।

Advertisement

এই ধরনের পর্যবেক্ষণ ভাবিয়ে তুলেছিল খলিসানি বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তাঁরা ঠিক করেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার মূলস্রোতে রাখতে তাঁরাই এলাকায় যাবেন। সেইমতোই গত ১৬ অগস্ট থেকে শুরু হয়েছে তাঁদের ভ্রাম্যমাণ শিক্ষা শিবির। বিলকুলি, বকুবপুর, নবগ্রাম, মনসাতলা, অনন্তপুর, বৌবাজার ঘুরে চলছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের শিক্ষাদান। খলিসানি বিদ্যামন্দির ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি স্কুলের ছেলেমেয়েরাও আসছে।

বেশ কিছু গণ-সংগঠন, শিক্ষানুরাগী বা প্রাক্তন ছাত্র শিবির আয়োজনে সাহায্য করছেন। তাঁরা বা অভিভাবকেরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য চা-জল নিয়ে আসছেন। প্রধান শিক্ষক জানান, স্কুলে কয়েক দিন মিড-ডে মিল বিলির কাজ চলবে। তার পরে ফের শিবির চালু হয়ে যাবে। বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া উত্তম সাউ গত ১৫ অগস্ট দুর্ঘটনার মারা যায়। তার স্মৃতিতে শিবির উৎসর্গ করা হয়েছে। ওই স্কুলে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন রামমোহন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক পড়ুয়াই পিছিয়ে পড়েছে। তাদের পড়ার অভ্যাসে ফেরানো জরুরি। এই কাজটিই আমরা শুরু করতে পারলাম।’’

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজদীপ চৌধুরীর শুধু ইংরেজি এবং অঙ্কের গৃহশিক্ষক আছেন। রাজদীপের কথায়, ‘‘আমাদের পড়াশোনা স্কুলের উপরে নির্ভরশীল। অনলাইনে পড়া তো স্কুলের বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা শিবিরে শিক্ষকদের থেকে ফের সরাসরি শিখতে পারছি।’’ রাজদীপের বাবা জগদীশ চৌধুরী গাড়ি চালান।।

রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হেমন্ত আদিগিরির ছেলে প্লাবন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। হেমন্তের স্ত্রী অণিমা বলেন, ‘‘বাড়িতে ছেলেকে পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। এত দিন ছেলের পড়ার আগ্রহ কমে গিয়েছিল। এখন আবার মনোযোগ বাড়ছে। আমাদের অনুরোধ, যত দিন স্কুল না খুলছে, মাস্টারমশাই-দিদিমণিরা যেন শিবির চালিয়ে যান।’’ একই আর্জি অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া স্পর্শের বাবা দেবজ্যোতি দাসেরও। বেসরকারি সংস্থার চাকুরে দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘আমাদের স্মার্টফোন নেই। গৃহশিক্ষকও রাখতে পারিনি। যে টুকু পারি, নিজেরাই দেখিয়ে দিই। শিক্ষা শিবির চালু হয়ে খুব উপকার হল।’’

ভুলতে বসা বর্গমূল বা উৎপাদকে বিশ্লেষণ আবার নির্ভুল করতে পারছে পড়ুয়ারা। ঝালিয়ে নিচ্ছে ব্যাকরণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন