টিকার লাইন তদারকিতে পুলিশ। বুধবার পাঁচলা কুলাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: সুব্রত জানা।
করোনার জীবনদায়ী ওষুধ নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠছিলই। এ বার ৫০০-১০০০ টাকায় টিকাকরণের লাইন ‘বিক্রি’র দুষ্টচক্রের হদিশ মিলল হাওড়ার পাঁচলায়।
মঙ্গলবার সকালে এখানকার কুলাই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই লাইন ‘বিক্রি’কে কেন্দ্র করে গোলমাল হয়। পুলিশ আসে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে বুধবার টিকাকরণের পরে শেষমেশ টিকা-কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় প্রশাসন।
এতদিন পাঁচলায় টিকাকরণ চলছিল ওই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই। ফলে, ভিড় হচ্ছিল। আগের দিন রাত ১১টা থেকে লাইন পড়ছিল। অভিযোগ, ভিড়ের সুযোগ নিয়ে শুরু হয়ে যায় লাইন ‘বিক্রি’। স্থানীয় কয়েকজন যুবক আগে থেকে টিকা নিতে আগ্রহী লোকজনের সঙ্গে ৫০০-১০০০ টাকায় রফা করে নিচ্ছিল। তাঁদের হয়ে সেই যুবকেরা আগের দিন রাত ১১টা থেকে লাইন দিচ্ছিল। যাঁদের সঙ্গে রফা হত, তাঁরা পরের দিন সকালে এসে যাচ্ছিলেন। তাঁদের লাইনে ঢুকিয়ে দিয়ে যুবকেরা সরে যাচ্ছিল।
মঙ্গলবার সকালে এই লাইন ‘বিক্রি’কে কেন্দ্র করেই গোলমাল হয়। টিকা নেওয়ার জন্য যাঁরা আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁরা দেখেন, সকালে তাঁদের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন কয়েকজন আগন্তুক। ওই আগন্তুকরা তাঁদের জানান, টাকার বিনিময়ে লাইন কিনেছেন। তারপরেই বেঁধে যায় গোলমাল। খবর যায় স্থানীয় বেলডুবি পঞ্চায়েতে, পুলিশে।
ওসি শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সকালে নিজে হাজির হন। তার আগেই অবশ্য লাইন বিক্রি করায় অভিযুক্তরা চম্পট দেয়। শুরু হয় টিকাকরণ। ওসি জানিয়ে দেন, যাঁরা টিকা নেবেন, তাঁদের নিজেদেরই আধার কার্ড নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে। পুলিশ তাঁদের নাম লিখে টোকেন দিয়ে দেবে। সেই টোকেন দেখিয়ে টিকা নেওয়া যাবে। সেইমতো মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ ফের ওসি আসেন। দেখেন ২৭ জন তখনই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা সকলে নিজেরাই টিকা নিতে এসেছিলেন বলে ওসি জানান। রাতে আরও অনেকে আসেন। ওসি-র তত্ত্বাবধানে সকলের নাম খাতায় লিখে নেওয়া হয়। বুধবার সকালেও ওসি হাজির হন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নামের তালিকা ধরে ১৮০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। টিকাকরণ শেষ হওয়া পর্যন্ত বাহিনী নিয়ে ওসি স্বাস্থ্যকন্দ্রে হাজির ছিলেন।
টিকাকরণ শেষ হওয়ার পরে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন বৈঠক করেন। এ ভাবে প্রতিদিন পাহারা দিয়ে টিকাকরণ সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানায়। সে ক্ষেত্রে ফের লাইন ‘বিক্রি’র দুষ্টচক্র জেগে উঠবে, এই আশঙ্কায় বৈঠকে ঠিক হয়, কুলাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও টিকাকরণ হবে। ভিড় কম হলে লাইন বিক্রি হবে না।
বিডিও এষা ঘোষ বলেন, ‘‘এক-একটি পঞ্চায়েতে একদিন করে টিকাকরণ হবে। ফলে, সেই এলাকার বাসিন্দাদের কুলাইয়ে আসতে হবে না। গ্রামবাসীরা নিজেদের এলাকাতেই টিকা নিতে পারবেন।’’ ওসি বলেন, ‘‘কুলাইয়ে যা ভিড় হচ্ছিল তারই সুযোগ নিয়েছিল কিছু অসাধু যুবক। সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।’’
কুলাইয়ের বাসিন্দা এক যুবক এ দিন বলেন, ‘‘আমার মা আর মাসির জন্য দুই যুবককে দিয়ে আগের দিন দু’টি লাইন বুক করেছিলাম। কথা ছিল মা আর মাসি বুধবার সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে যাবেন। তারপরে যুবকদের ৮০০ টাকা দিয়ে দেব। সকালে এসে দেখি পুলিশ লাইন নিয়ন্ত্রণ করছে। যাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছিল, সেই দুই যুবক বেপাত্তা।’’