পরিকাঠামো আরও বাড়ানোর দাবি
coronavirus

আইসিইউ শয্যা বাড়ন্ত হুগলিতে

আইসিইউ শয্যার অভাবে অনেক সঙ্কটাপন্ন রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বাড়ছে মৃত্যুহার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

একের পর এক হাসপাতালে ফোন করে একই প্রশ্ন করছিলেন ডানকুনির এক যুবতী। একটা আইসিইউ বেড হবে?

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুবতীর ফোন করাই সার। শয্যা মিলল না। যুবতীর মা করোনা সংক্রমিত। বুধবার তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসক জানান, শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। আইসিইউ-তে সরানো প্রয়োজন। এখানে ওই শয্যা নেই। তখনই শুরু আইসিইউ শয্যার খোঁজ।

কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও খোঁজ নেন সংক্রমিতের মেয়ে। ওয়ালশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন, তাঁরাই একটি শয্যা জোগাড় করে দিন। যুবতীর কথায়, ‘‘এক জন বলেন, ওঁরা চেষ্টা করবেন। তবে কোথাও আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। কখন ফাঁকা হবে, বলা যাবে না। আমরাই যেন চেষ্টা করি।’’

Advertisement

বিকেলে হুগলিতে কোভিড রোগী ভর্তির সরকারি নম্বরে ফোন করা হলে রোগিণীর নাম, সমস্যার কথা লিখে নেওয়া হয়। তার পরে জানানো হয়, আইসিইউ শয্যা বাড়ন্ত। ফাঁকা হলে জানাবেন। যুবতীর গলায় কান্না, ‘‘মায়ের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে।’’

কোভিড আক্রান্ত প্রিয়জনের জন্য আইসিইউ শয্যার জন্য এ ভাবে অনেকেই মাথা খুঁড়ছেন হুগলিতে। কোন্নগরের বাসিন্দা অরুণাভ রায় জানান, দিন কয়েক আগে তিনি কোভিড আক্রান্ত শ্বশুরমশাইকে ভর্তি করান উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। আইসিইউ শয্যার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেখানে না-মেলায় শহরের একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করা হয়। অরুণাভ বলেন, ‘‘আমি ট্র্যাভেল এজেন্ট। গত বছর লকডাউনের সময় থেকে ব্যবসা কার্যত বন্ধ। তিন দিনে নার্সিংহোমের বিল শুনছি ৮২ হাজার টাকা। লোকের থেকে টাকা তুলছি।’’ শ্বশুরের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে সামাজিক মাধ্যমে সাহায্য পর্যন্ত চাইতে হচ্ছে ৩৪ বছরের ওই যুবককে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা পেলে এটা হত না।’’

সিপিএমের ছাত্র-যুবদের ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-এর মাধ্যমে সম্প্রতি কোতরংয়ের করোনা আক্রান্ত এক যুবককে ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ক্ষেত্রেও আইসিইউ-র প্রয়োজন হয়েছিল। সংগঠনের সদস্য সায়াঙ্ক মণ্ডল বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তির সরকারি নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, আইসিইউ শয্যা নেই। শেষে শ্রমজীবী হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে, রোগী বাঁচেনি।’’

এই অবস্থায় সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসায় হুগলিতে পর্যাপ্ত সরকারি পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ উঠছে। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে অনেক খরচ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও আইসিইউ শয্যা মিলছে না। চিকিৎসকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বার কোভিডের কামড় অনেক বেশি। অনেকেই সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছেন। আইসিইউ-র প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু হুগলিতে আইসিইউ শয্যা অপ্রতুল বলে চিকিৎসকদের একাংশ মানছেন। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আইসিইউ শয্যার অভাব রীতিমতো অনুভব করছি।’’

সমস্যার কথা মানছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে জেলায় আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই।’’ তিনি জানান, কোথায় কত শয্যা ফাঁকা রয়েছে, রোগীর বাড়ির লোকেরা সরকারি পোর্টালেই দেখতে পারেন। সঙ্কটাপন্ন হলে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যোগাযোগ করতে পারেন।

কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের হুগলি শাখার সদস্যদের অভিযোগ, আইসিইউ শয্যার অভাবে অনেক সঙ্কটাপন্ন রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বাড়ছে মৃত্যুহার। আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর দাবিতে তারা স্মারকলিপি দিয়েছেন শুভ্রাংশুবাবুকে। হুগলির জেলাশাসক এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যভবনেও চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement