Ambulance Driver

জল না খেয়ে গলদঘর্ম হয়েও পরিষেবায় ব্রতী জাহির

রমজান মাস চলছে। রোজা রেখেছেন জাহির। দিনভর জলস্পর্শ করতে নেই। তাই, করোনাকালে এ ভাবেই দুই ধর্ম পালন করে চলেছেন বছর ছাব্বিশের ওই অ্যাম্বুল্যান্স-চালক।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চণ্ডীতলা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৮:০৭
Share:

চালকের আসনে: অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে জাহির। — নিজস্ব চিত্র

বৈশাখের খর রোদ। সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে ‘ছায়াসাথী’।

Advertisement

ভিতরে শ্বাসকষ্টের রোগী। কোভিড পজ়িটিভ। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। এক জনকে ভর্তি করিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ছোটে অন্য রোগীর বাড়ি। এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতাল ঘুরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে পিপিই-র ভিতরে ঘেমেনেয়ে যায় চালক জাহির আব্বাসের শরীর। তেষ্টায় ছাতি ফাটে। তবু, জল খাওয়ার উপায় নেই!

রমজান মাস চলছে। রোজা রেখেছেন জাহির। দিনভর জলস্পর্শ করতে নেই। তাই, করোনাকালে এ ভাবেই দুই ধর্ম পালন করে চলেছেন বছর ছাব্বিশের ওই অ্যাম্বুল্যান্স-চালক। এক দিকে, নিজের ধর্ম। অন্য দিকে, মানবতার ধর্ম। চলছে পড়াশোনাও।

Advertisement

জাহিরের বাড়ি ডানকুনির মনবেড় মল্লিকপাড়ায়। বাবা-মা, স্ত্রী, তিন ভাই, মেজো ভাইয়ের স্ত্রী মিলিয়ে ৮ জনের সংসার। পাঁচ বছর ধরে তিনি অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছেন। সেই ফাঁকে পড়াশোনা চলছে ফুরফুরা ফতেহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার এই ছাত্রের।

মাসছয়েক আগে চণ্ডীতলার বাসিন্দা তথা হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় মা ছায়াদেবীর স্মৃতিতে একটি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দান করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। শুরুর দিন থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি জাহির চালাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে থাকেন পাপ্পু মাঝি। হাসপাতালের পথে রোগীর শুশ্রুষার দরকার হলে তিনি করেন।

করোনা-কালেও দু’জনে কাজ করছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। সকাল হোক বা বিকেল, সন্ধে হোক বা গভীর রাত— মোবাইল বাজলেই বেরিয়ে পরছেন। গত এক মাসে শতাধিক রোগীকে তাঁরা হুগলি বা কলকাতার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।

জাহির জানান, রোজার নিয়ম অনুযায়ী কাকভোরে উঠে খাওয়া (সেহরি) সারতে হয়। বেশি রাতে বেরোলে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে বের হন। বিকেলেও তাই। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে বা কোনও জায়গায় বসে ইফতার সারা বলতে গেলে হচ্ছেই না। সন্ধ্যায় ফিরতে পারব না বুঝলে গাড়িতে ছোলা-আদা, ফল আর জল নিয়ে নিই। আজানের সময় খেয়ে নিই। একই ভাবে সেহরিও মাঝেমধ্যেই রাস্তাতেই সারতে হচ্ছে।’’ গাড়ি চলতে থাকলে ইফতারের সময়ের কথা জাহিরকে স্মরণ করিয়ে দেন পাপ্পু। খাবার এগিয়ে দেন।

জাহির জানান, করোনা রোগীকে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে মা কিছুটা আপত্তি করেছিলেন। পরে বুঝতে পারেন, সবাই পিছিয়ে গেলে কী ভাবে চলবে! বাবাও সাহস দেন। ভয় পেলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে না। পিপিই-র প্রচণ্ড গরম সয়ে গিয়েছে। মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্যএ টুকু মেনে নিয়েছেন। জাহিরের কথায়, ‘‘আল্লার কাছে প্রার্থনা করি, আমার বাংলা দ্রুত করোনামুক্ত হোক। আমার দেশ তথা পৃথিবীও দ্রুত সেরে উঠুক এই অসুখ থেকে।’’

কথার মাঝে মোবাইল বেজে ওঠে। পাপ্পুকে পাশে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেন জাহির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন