Illegal Hooch Industry

ঝাঁপ খুলল চোলাই ঠেক, ফের প্রকাশ্যে মদ্যপান সেই এলাকায়

সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে রমরমিয়ে চলছে চোলাই ঠেক।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০০
Share:

রমরমিয়ে: চোলাই বিক্রি চলছে। নিজস্ব চিত্র

হাওড়ার এই গ্রামেই কিশোরী-মেয়ের যৌন হেনস্থায় বাধা দেওয়ায় সপ্তাহ খানেক আগের রাতে খুন হয়ে গিয়েছিলেন বাবা। তারপরই এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা ও প্রকাশ্যে মদ্যপান নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। সেই দুর্ঘটনার পর দিন কয়েক তালা ঝুলেছিল চোলাইয়ের ঠেকগুলিতে। পুলিশি নজরদারির জেরে লাগাম পরেছিল প্রকাশ্য মদ্যপানেও। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরস্বতী পুজোর দিন থেকে ফের ঝাঁপ খুলতে শুরু করেছে চোলাই ঠেকগুলি। আবার পাড়ায় পাড়ায় বসছে মদ খাওয়ার আসর। তাই ফের নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছেন হাওড়া গ্রামীণের ওইএলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে রমরমিয়ে চলছে চোলাই ঠেক। থানা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে চলছে চোলাই বিক্রি। কোথাও আবার খালের ধারে বসে চলছে মদ্যপান। থানায় ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে আসে পুলিশ। তাদের দেখে পালায় চোলাই বিক্রেতারা। মদের আসরও ফাঁকা হয়ে যায়। তবে সেখানে পড়ে ছিল চোলাইয়ের প্যাকেট, প্লাস্টিকের গ্লাস।

গ্রামীণ পুলিশের দাবি, এলাকায় চোলাইয়ের ঠেক বলে কিছু নেই। যেগুলো ছিল তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ হয়তো অন্য কোথাও থেকে চোলাই কিনে এনে সেখানে বসে খাচ্ছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘যে চোলাই ঠেকগুলি ছিল, সেগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চোলাই রুখতে নিয়মিত অভিযান চলে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশের দাবি অবশ্য মানতে নারাজ গ্রামের বাসিন্দারা। এক প্রৌঢ়া জানান, তাঁর বাড়ির সামনে কয়েক জন যুবক দিন কয়েক আগে রাতভর মদ খেয়ে বক্স বাজিয়ে নেচেছে। কিন্তু ভয়ে তিনি প্রতিবাদ করেননি। ওই প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘আমি একা থাকি। জানলা-দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম। পুলিশে যাওয়ার সাহস হয়নি। এলাকার মেয়েরা তো ওই ছেলেগুলোর জন্য সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তায় বেরোয়নি।’’

গ্রামের আর এক মহিলা জানান, তাঁর স্বামী নিয়মিত চোলাই খান। চোলাই ঠেকগুলি দিন কয়েকের জন্য বন্ধ হওয়ায় স্বস্তিতে ছিলেন তিনি। বছর ত্রিশের ওই মহিলা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছিল, ওই ঘটনার পর পুলিশের নজরদারিতে আর ঠেকগুলো খুলবে না। কিন্তু যে কে সেই হয়ে গেল তো! পুলিশ তাহলে কোথায় আরনজরদারি বাড়াল?’’

এলাকায় চোলাই ঠেকগুলি চলা নিয়ে তৃণমূলকেই দুষছে বিরোধীরা। স্থানীয় এক সিপিএম নেতার ক্ষোভ, ‘‘তৃণমূলের এই রাজ্যে যুব সমাজের হাতে কাজ নেই। চোলাইতে তারা ডুবে যাচ্ছে। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। আর ওই চোলাই ঠেকগুলো তো তৃণমূল নেতাদের মদতে চলে।’’ এক বিজেপি নেতার কটাক্ষ, ‘‘পুলিশ আর শাসকদলের মদতেই তো চোলাইয়ের এই রমরমা। এই ঘটনার দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না।’’

অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপ-প্রধানের দাবি, ‘‘ঘটনার পর পুলিশকে বলা হয়েছিল, এলাকার সব চোলাই ঠেক বন্ধের জন্য। সেই কাজ চলছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কয়েক বার ঠেক ভাঙা হয়েছে। চোলাই বিক্রির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও চোলাই বিক্রি কমানো যাচ্ছে না। মানুষের নিজেদেরও একটু সচেতনতা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন