কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের ইকো পার্ক। নিজস্ব চিত্র।
ছবিটা পাল্টে গিয়েছে মাসদেড়েকে।
বছরের পর বছর আবর্জনায় ভরে উঠেছিল গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের কুমারগঞ্জ গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের ধারের প্রায় ২ হেক্টর জমি। একই অবস্থা ছিল বদনগঞ্জ-ফলুই ১ পঞ্চায়েতের কর্ণপুরের মাঠের একাংশও। পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠছিল। দু’জায়গাতেই প্রশাসনের উদ্যোগে ইকো-পার্ক গড়া হয়েছে। এতে শুধু পরিবেশই রক্ষা হচ্ছে না, কর্মসংস্থানও হচ্ছে গ্রামবাসীর। একইসঙ্গে দুই পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল মজবুতের ক্ষেত্রও নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও দেবাশিস মণ্ডল।
দুই ইকো-পার্কে ১০০ দিনের প্রকল্পে দফায় দফায় গ্রামবাসীরা কেউ ফুল-ফলের গাছ লাগাচ্ছেন, কেউ মাছ চাষ করছেন, কেউ পুকুর খনন করছেন। মাসে গড়ে ১৫০ জন করে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে বলে ব্লক প্রশাসনের দাবি। বিডিও বলেন, ‘‘দুটি জায়গাতেই মাছ চাষ শুরু করে আয়ের ক্ষেত্র বাড়ানো হয়েছে। জীববৈচিত্র সংরক্ষণের কাজ চালু আছে। পার্ক সংরক্ষণ-সহ নানা কাজে এলাকায় কর্মসংস্থানও হচ্ছে।”
মাসদেড়েক হল আনুষ্ঠানিক ভাবে খোলা হয়েছে পার্ক দু’টি। কোথাও এখনও প্রবেশমূল্য ধার্য হয়নি। প্রসঙ্গত, জীবসম্ভার (গাছপালা, ছোটখাটো জীবজন্তু) বাঁচিয়ে রাখতে ২০২০ সালের আগস্ট মাস নাগাদ হুগলি জেলার ১৮টি ব্লকেই ‘জীববৈচিত্র্ পার্ক’ করার নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। তারপরেই ওই দুই পঞ্চায়েতে শুরু হয় উদ্যোগ।
কুমারগঞ্জের ইকো-পার্কে লাগানো হয়েছে ৮০০ নারকেল চারা, কাঁঠাল, আম, জাম-সহ নানা ফলের গাছ, হরিতকী, বয়রা ইত্যাদি ওষধি গাছ, ফুলগাছ এবং বাহারি গাছগাছালি। এ ছাড়া, একটি গোলাকার এবং একটি ক্যাপসুল আকারের দু’টি পুকুর খনন করে মাছের চাষ শুরু হয়েছে। খড়ের ছাউনি দেওয়া চারদিক খোলা ৮টি কটেজ বানানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে সৌরবিদ্যুতের বাতিস্তম্ভ। আছে শিশুদের খেলা এবং প্রবীণদের বসে আড্ডার জায়গা।
পার্কের একদিকে শতাব্দীপ্রাচীন একটি অশ্বত্থ গাছকে ঘিরে তৈরি পিকনিক স্পটে এখনই ভিড় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পার্কের তদারকির দায়িত্বে থাকা নারায়ণ হালদার। তিনিও দীর্ঘদিন বেকার বসেছিলেন। পার্ক হওয়ায় কাজ মিলেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণবাবু।
কর্ণপুর ইকো পার্ক। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
পঞ্চায়েত প্রধান মুনমুন রায় বলেন, “আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। নার্সারি করার আনুমোদন মিলেছে। মশার লার্ভা ধ্বংস করতে গাপ্পি মাছ চাষ করে বিক্রিরও পরিকল্পনা আছে। খালি পিকনিকের জন্য জানুয়ারি মাস থেকে প্রবেশমূল্য ধার্য করার চিন্তাভাবনা করেছি। সবমিলিয়ে পঞ্চায়েতের নড়বড়ে নিজস্ব তহবিল এ বার অনেকটাই পুষ্ট করা যাবে। মাসে ১৫০-২০০ জনের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হয়েছে।’’
বদনগঞ্জ-ফলুই ১ পঞ্চায়েতের কর্ণপুরের মাঠে অর্জুনগেড়িয়া নামে একটি পুকুর এবং সংলগ্ন ২.০২ একর খাসজমিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ইকো-পার্কটি। আয়ের ক্ষেত্র মজবুত করতে এখানে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগির পোল্ট্রি এবং অসময়ের আনাজ ফলাতে পলি হাউসের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পর্যটক টানতে ‘প্রজাপতি পার্ক’ তৈরির চিন্তাভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষাল।