International Mother Language Day

ভাষা-দিবস, সফিউরের জন্মদিন পেরোল নিঃশব্দে

১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিলের উপরে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। প্রতিবাদে শোক-মিছিল বেরোয় পরের দিন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

কোন্নগর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫২
Share:

কোন্নগরে স্মৃতিস্তম্ভ। পাশে সফিউর। নিজস্ব চিত্র

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার জন্য নানা অনুষ্ঠান হবে সর্বত্র। কিন্তু সফিউর রহমানকে মনে রেখেছেন ক’জন! তাঁর ১০৫তম জন্মদিন কার্যত নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল গত ২৪ জানুয়ারি।

Advertisement

১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিলের উপরে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। প্রতিবাদে শোক-মিছিল বেরোয় পরের দিন। ফের পুলিশের গুলি চলে।দু’দিনে শহিদ হন বেশ কয়েক জন। তাঁদেরই অন্যতম সফিউর হুগলি জেলার সন্তান।

বলাগড়ের বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা করেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সফিউরের জন্মদিন চুপিসারে পেরিয়ে যাওয়া যন্ত্রণার।’’ সফিউরের কাকার মেয়ে হাসিনা খাতুন বলেন, ‘‘দাদা এমন একটা কারণে শহিদ হয়েছিল, ভাবলে গর্ব হয়। তবে, দাদাকে যে ভাবেমনে রাখা উচিত ছিল, তা হয়নি। দাদাকে নিয়ে তেমন কোনও অনুষ্ঠান তো হয় না। আমাদের ডাকা হলে নিশ্চয়ই যাব।’’

Advertisement

কোন্নগরের ডিওয়াল্ডিতে জিটি রোডের ধারে সফিউরদের বাড়ি। সফিউর থাকতেন দোতলার একটি ঘরে। বাড়িটি এখন কার্যত ভগ্নপ্রায়। পার্থ জানান, কোন্নগর ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ে (এখন কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয়) পড়তেন সফিউর। ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পাশের পরে কলকাতায় সরকারি কমার্স কলেজে আই কম পাশ করে চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি পান। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে বাবার হাত ধরে বাংলাদেশে চলে যান। সেখানে হাই কোর্টের হিসাবরক্ষক ছিলেন। শহিদ হওয়ার সময় তাঁর মেয়ের বয়স ছিল তিন বছর। তিন মাস পরে স্ত্রী পুত্রসন্তান প্রসব করেন। ইতিহাস ঘেঁটে পার্থ বলেন, ‘‘সেই সময়ে ওখানকার সরকার হাসপাতালে গিয়ে লাশ গুম করছিল। সফিউরের দেহ দু’দিন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।’’

বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘মরণোত্তর একুশে’ সম্মান দিয়েছে। কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে জিটি রোডের ধারে তাঁর স্মৃতিতে শহিদ স্মারক বসিয়েছে স্থানীয় পুরসভা। একুশের অনুষ্ঠান হয় পুরসভার উদ্যোগে। কোন্নগরের বাসিন্দা, সাংস্কৃতিক কর্মী সুজিত কর বলছেন, ‘‘সফিউরকে যে ভাবে স্মরণ করা উচিত ছিল, তা হয়তো আমরা পারিনি। আরও ভাল করে মনে রাখা দরকার ছিল।’’ বছর কয়েক আগে খুড়তুতো ভাই আহ্‌সানুর রহমান আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন, সফিউরের স্মৃতিধন্য ঐতিহ্য তাঁরাই ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন