Madhyamik: মাদ্রাসা ভবন তৈরির কাজে এসে মাধ্যমিকে ৬৪%

প্রধান শিক্ষক জানান, কাজের জন্য আশিক নিয়মিত ক্লাস করতে পারেনি। কিন্তু পড়ায় ফাঁকি দেয়নি।

Advertisement

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৩
Share:

কাজে ব্যস্ত আশিক মোল্লা।

বছর তিনেক আগের কথা। বাগনানের খাজনাবাহালা হাইমাদ্রাসার নতুন ভবন তৈরির জন্য রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে এসেছিল বছর পনেরোর আশিক মোল্লা। কিন্তু কাজ ফাঁকি
দিয়ে সে একদৃষ্টে চেয়ে থাকত ক্লাসের দিকে। বিষয়টি চোখ এড়ায়নি শিক্ষকদের। পরিবারের অনটনের কারণে স্কুলছুট ছেলেটিকে তাঁরা ভর্তি করিয়ে নেন। সেই আশিক এ বার মাধ্যমিকে ৬৪% নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে।

Advertisement

আশিকের বাড়ি শ্যামপুরের দামোদরপুরে। তার পরিবারের লোকেরা জানান, সে শ্যামপুরের একটি স্কুলে পড়ত। কিন্তু অভাবের সংসারে সপ্তম শ্রেণিতেই পড়া ছেড়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে লেগে পড়তে হয়। সেই কাজ করতে করতেই সে গিয়ে হাজির হয় খাজনাবাহালা হাইমাদ্রাসায়।

পড়াশোনার প্রতি ছেলেটির আগ্রহ অবাক করেছিল হাইমাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ক্লাসের পড়া শোনার প্রতি তার মনোযোগ দেখে শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রথমে অবাকই হয়েছিলেন। তাঁরা আশিককে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন। আশিক জানায়, ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার উপায় নেই তার। সে কথা শুনে শিক্ষকেরাই মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়ান। প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ছেলেটির বাড়িতে যোগাযোগ করেন। ২০১৮ সালে তাকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক জানান, কাজের জন্য আশিক নিয়মিত ক্লাস করতে পারেনি। কিন্তু পড়ায় ফাঁকি দেয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। কবে মাদ্রাসা খুলবে, প্রায়ই আশিক সেই খোঁজ নিয়েছে।’’

আশিকের মাধ্যমিক পাশ করার খবরে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো বটেই, খুশি বাড়ির লোকেরাও। আশিকের দাদা আরিফ বলেন, ‘‘আনন্দ হচ্ছে। ছোট থেকেই ভাইয়ের পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক। কিন্তু অভাবের জন্য পড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক, সম্পাদক শেখ সারওয়ারউদ্দিন এবং অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধন্যবাদ। ওঁদের জন্য ভাই মাধ্যমিক পাশ করতে পারল।’’ প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘প্রতিকূলতা জয় করে আশিক দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ, অধ্যবসায় আমাদের মুগ্ধ করেছে।’’

কাজের জন্য আশিক এখন রয়েছে ছত্তীশগঢ়ে। চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরবর্তী পড়াশোনা কী ভাবে আশিক চালিয়ে যেতে পারে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement