বন্যার জল নামতেই খেত বাঁচানোর চেষ্টা শুরু
bengal flood

bengal flood: কৃষিতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হুগলিতে

কোন জমির ধান শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যাবে, জানেন না হুগলির চাষিরা। বন্যার জল নামতে তাঁরা এখন শুধু লোকসান ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Advertisement

পীযূষ নন্দী এবং গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২১ ০৭:৩৩
Share:

নষ্ট হয়েছে ধানের জমি। গোঘাটের বালি অঞ্চলে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

জমিতে লেপটে হেজে যাওয়া আমন ধানের চারা সোজা করছেন কেউ। কেউ ধানগাছের পাতায় জমে থাকা মোটা পলির স্তর ধুতে জল ‘স্প্রে’ করছেন। কিন্তু কোন জমির ধান শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যাবে, জানেন না হুগলির চাষিরা। বন্যার জল নামতে তাঁরা এখন শুধু লোকসান ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Advertisement

ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল আরামবাগ মহকুমার ৬ ব্লকে। এ ছাড়া, জেলার তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া এবং হরিপালের একাংশের কৃষিজমিও প্লাবিত হয়। জমা জল অন্যত্র নামলেও খানাকুলের দু’টি ব্লকের বেশিরভাগ চাষজমিতেই এখনও প্রায় দু’ফুট জল দাঁড়িয়ে।

এই অবস্থায় ধান-সহ অন্যান্য চাষের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করেছে জেলা কৃষি দফতর। তাতে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটিতে। এর মধ্যে শুধু আরামবাগ মহকুমাতেই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। এর পরে খানাকুলের দু’টি ব্লকের হিসেব ধরলে সেই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তবে, জেলা কৃষিকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত যে সব জমির ফসল বেঁচে যাবে, সেগুলি আর ক্ষতির তালিকায় থাকবে না। ফলে, টাকার অঙ্ক কিছুটা কমতেও পারে।

Advertisement

জল নেমে যাওয়ার পরে আরামবাগ মহকুমায় মূলত পুরশুড়া, আরামবাগ এবং গোঘাটের দু’টি ব্লকের চাষিরাই ধান বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছে মহকুমা কৃষি দফতর। আরামবাগের সালেপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার আতাপুরের চাষি পূর্ণচন্দ্র দাস দু’দিন ধরে তাঁর সাত বিঘা জমির ‘হেজে’ যাওয়া ধানের চারা খাড়া করছেন। তিনি বলেন, “চাষই একমাত্র রুটি-রুজি। যতটা পারি বাঁচানোর চেষ্টা করছি। জমিতে লেপটে থাকা চারাগুলো খাড়া করার পর একদিন বৃষ্টিতে পাতা থেকে কিছু পলি ধুয়ে গিয়েছে। নিজেরাও স্প্রে করে ধুচ্ছি। পাতা পরিষ্কার হলে কৃষি দফতরের পরামর্শমতো ওষুধ দিয়ে বাঁচাতে চেষ্টা করব।’’

তবে, বহু খেতেরই বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেকেই জানান, নতুন করে বীজতলা তৈরি করে চাষের মরসুম থাকবে না। তাই পাশের পূর্ব বর্ধমান জেলা সংলগ্ন গ্রাম থেকে বীজ কেনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

মহকুমা কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, বন্যায় এখানকার ৫৮৬টি মৌজার মধ্যে ৩০৭টি মৌজার চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আমন ধানের বীজতলা তৈরি হয়েছিল ২৬১৩ হেক্টরে। তার মধ্যে ২০৪৭ হেক্টর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধান রোয়া গয়ে গিয়েছিল ৩৭ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ১৮ হাজার ৭৪৭ হেক্টরের ধান নষ্ট। এ ছাড়া, ক্ষতির তালিকায় রয়েছে ৪৮ হেক্টর জমির বাদাম এবং ২৫৫ হেক্টর জমির আনাজ।

এখনও জল না-নামায় খানাকুলের দু’টি ব্লকের চাষিরা ধরেই নিয়েছেন, আর ফসল বাঁচানো যাবে না। মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ জানান, সাধারণ ভাবে স্থির জলে আমন ধান ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ডুবে থাকলে তা পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর জমি দিয়ে জল বয়ে গেলে সেই ধান পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত নষ্ট না-হওয়ার নজির আছে।

জাঙ্গিপাড়ায় ডাকাতিয়া খালের বাঁধ ভেঙে এবং কৌশিকী নদী উপচে মুণ্ডলিকা, হরিপুর এবং ফুরফুরা পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামে চাষের ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে বীজতলা। ফলে, চাষ শুরুই করতে পারেননি বহু চাষি। মামুদপুরের এক চাষি বলেন, ‘‘বীজতলা যে ভাবে পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাতে ফের বীজতলা তৈরির পর চাষের আর সময় থাকবে না।’’

ওই ব্লকেরই রাজবলহাট পঞ্চায়েতে পাট ও কচু চাষের ক্ষতি হয়েছে। রশিদপুর পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝিঙে ও পটল চাষ। জাঙ্গিপাড়ার জেলা পরিষদ সদস্য শেখ জব্বর বলেন, ‘‘জমি থেকে বন্যার জল নামতেই কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে চাষের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করার কাজ শুরু হয়েছে।’’

কৃষিপ্রধান এলাকা তারকেশ্বরেও দামোদরের বাঁধ ভেঙে কেশবচক, তালপুর, সন্তোষপুর এবং চাঁপাডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কেশবচকের চাষি মানস ঘোষ বলেন, ‘‘বীজতলার চারা সম্পূর্ণ পচে গিয়েছে। নতুন করে চারা বসিয়ে চাষের আর সময় পাওয়া যাবে না। আমাদের ব্লকে আনাজ ভাল হয়। কিন্তু জমিতে জল জমে গোড়াপচা রোগে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন