Uleberia Man's Death Row

‘এসআইআর-আতঙ্কে’ আত্মহত্যা ২৮ বছরের যুবকের! বাড়ি থেকে উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ, উলুবেড়িয়ায় অভিষেকের প্রতিনিধিদল

পরিবার এবং রাজ্যের শাসকদলের দাবি, এসআইআর-আতঙ্কে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন ২৮ বছরের জাহির মাল। এ নিয়ে রাজ্যে ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ পঞ্চম মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। দাবি ওড়াল বিজেপি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরুর দিনই এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে শোরগোল হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। পরিবার এবং রাজ্যের শাসকদলের দাবি, এসআইআর-আতঙ্কে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন উলুবেড়িয়ার এক ঠিকাশ্রমিক। এ নিয়ে রাজ্যে ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ পঞ্চম মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।

Advertisement

উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের খলিসানি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ছিলেন জাহির মাল। ২৮ বছরের যুবক দিনমজুরের কাজ করতেন। উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। তবে বাড়ি থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। পরিবারের দাবি, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন জাহির। সেই জন্যই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন যুবক। মৃতের স্ত্রী রেজিনা বিবি বলেন, ‘‘এসআইআর নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল ও। সবসময় বলত, ওকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। গত কয়েক দিন এই ভয় কাজ করত ওর মনে। ভয়েই নিজেকে শেষ করে ফেলেছে ও।’’

তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একটি প্রতিনিধিদল যাচ্ছে মৃতের বাড়িতে। রাজ্যের পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে বলেন, ‘‘আমাদের দল এই পরিবারের পাশে রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্যে। বাংলা ভাষায় কথা বলা মানেই বাংলাদেশি, এমনটা বোঝানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলব, মৃত্যুর রাজনীতি বন্ধ করুন। এই ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ওই পরিবারের পাশে থাকতে।’’

Advertisement

অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, এমন ঘটনার জন্য দায়ী তৃণমূলই। তারাই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অকারণে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এসআইআর নিয়ে ভয় দেখিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

এর আগে রাজ্যে চারটি মৃত্যুর নেপথ্যে এসআইআর নিয়ে আতঙ্ককে দায়ী করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ‘এনআরসি-র আতঙ্কে’ আত্মঘাতী হন আগরপাড়ার মশারি ব্যবসায়ী প্রদীপ কর। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মেলে। হাতের লেখা তাঁর কি না, মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে ওই নোটের। খড়দহ থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন প্রদীপের ভ্রাতৃবধূ। এর পর ৩০ অক্টোবর বীরভূমের ইলামবাজারের স্কুলবাগান সুভাষপল্লি এলাকায় আত্মহত্যা করেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধ ক্ষিতীশ মজুমদার। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা ক্ষিতীশ ইলামবাজারে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। এ জন্য এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন ওই নবতিপর। তাঁর মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনের নাম করে এফআইআর দায়ের হয় ইলামবাজার থানায়।

এর পর গত ২ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে বাড়িতে মৃত্যু হয় দিঘার এক হোটেলমালিকের। মৃতের নাম শেখ সিরাজউদ্দিন। পরিবারের দাবি, একটি নথিতে বাবার নাম ভুল দেখে চিন্তায় পড়ে যান প্রৌঢ় ব্যবসায়ী। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। হুগলির ডানকুনি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬০ বছরের হাসিনা বেগের মৃত্যু হয়েছে সোমবার। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। সেই কারণে তিনি বেশ চিন্তায় ছিলেন। হাসপাতালে মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। এ জন্য এসআইআরকে দায়ী করেছে পরিবার। তা সমর্থন করেছে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement