SIR in West Bengal

বাংলায় এসআইআর: মঙ্গলবার থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন বিএলওরা! তবে কমিশনের ফর্ম অনলাইনে পূরণ হবে না এখনই

কমিশন সূত্রে খবর, এসআইআর ম্যাপিংয়ের সময়ে যে ভোটারদের তথ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের শুধু এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করলেই চলবে। আলাদা করে কোনও নথি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না বলেই দাবি কমিশনের ওই সূত্রের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
Share:

মঙ্গলবার সকালে পূর্ব বর্ধমানে এসআইআরের জন্য এনুমারেশন ফর্ম বিলি। ছবি: সংগৃহীত।

মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু হয়ে গেল। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, দেশের আরও ১১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও একই সঙ্গে শুরু হয়েছে এসআইআরের কাজ। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও)। ভোটারদের তথ্যসংগ্রহ করছেন তাঁরা।

Advertisement

যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁদের জন্য অনলাইনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। তবে মঙ্গলবার থেকে ওই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরের এক আধিকারিক জানান, অনলাইন প্রক্রিয়াটি বাড়তি সুবিধা। তবে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে মিলবে না এই সুবিধা। কবে থেকে অনলাইনে এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা যাবে, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাননি তিনি। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনলাইন পরিষেবা শুরু করতে দু’-এক দিন দেরি হতে পারে।’’

কমিশনের তরফে ইতিমধ্যে এসআইআর ‘ম্যাপিং’ (শেষ যখন এসআইআর হয়েছিল, তখনের ভোটার তালিকার সঙ্গে চলতি বছরের সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা)-এর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে শেষ এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। ওই সময়ের ভোটার তালিকার তথ্য অনেক আগেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের (পুরানো) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন ওয়েবসাইটেও ওই তথ্য আপলোড করা রয়েছে।

Advertisement

এ রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা সাড়ে সাত কোটিরও বেশি। সিইও দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে এসআইএর ম্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে সোমবার পর্যন্ত ২ কোটি ৪৫ লক্ষ ৭১ হাজার ১১৪ জন ভোটারের তথ্য গত এসআইআর-এর তথ্যের সঙ্গে মিলেছে। অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত ৩২.০৬ শতাংশ ভোটারের তথ্য এসআইআর ম্যাপিংয়ের সময়ে মিলেছে। বস্তুত, এই ‘ম্যাপিং’-এর সময়ে বর্তমান ভোটার তালিকায় কোনও ভোটারের নাম ২০০২ সালের এসআইআর-তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। কত জনের নাম দুই তালিকাতেই অভিন্ন রয়েছে, তা দেখা হয়। পাশাপাশি বর্তমান ভোটার তালিকায় থাকা কোনও ভোটারের বাবা-মায়ের নাম ২০০২ সালের তালিকায় রয়েছে কি না, তা-ও মিলিয়ে দেখা হয়।

মঙ্গলবার সকালে কমিশনের দেওয়া এনুমারেশন ফর্ম হাতে সাধারণ ভোটারেরা। ছবি: সংগৃহীত।

কমিশন সূত্রে খবর, এসআইআর ম্যাপিংয়ের সময়ে যে ভোটারদের তথ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের শুধু এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করলেই চলবে। আলাদা করে কোনও নথি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না বলেই দাবি কমিশনের ওই সূত্রের। তবে যাঁদের ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে যথাযথ যোগসূত্র পাওয়া যাবে না, তাঁদের নথি যাচাই করাতে হবে। রাজ্যে যত ভোটার রয়েছেন, সকলের কাছেই যাবে কমিশনের এনুমারেশন ফর্ম। সিইও দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের ২৯৪টি আসনে ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন ভোটারের কাছে এনুমারেশন ফর্ম যাবে। এর দ্বিগুণ সংখ্যক ফর্ম ছাপানো হয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে রাজ্যে ৪১৮০০ বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ-২)-এর নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তবে কোন রাজনৈতিক দল কত এজেন্ট দিয়েছে এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সিইও দফতর। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বুথের সংখ্যা ৯৪ হাজারের বেশি। প্রধান যুযুধান দুই দল তৃণমূল এবং বিজেপি সব বুথে বিএলএ-দের নাম নথিভুক্ত করলে তা ১ লক্ষ ৮০ হাজার ছাপিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মাত্র ৪১৮০০ বিএলএ-র নাম নথিভুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়েছে।

রাজ্যে এসআইআরের কাজ কেমন চলছে, তা খতিয়ে দেখতে বুধবার দিল্লি থেকে রাজ্যে আসছে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে থাকবেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, ডেপুটি সেক্রেটারি অভিনব আগরওয়াল এবং প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এসবি জোশী। শুক্রবার পর্যন্ত তারা রাজ্যে থাকবে। উত্তরবঙ্গের তিন জেলা— কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে পর্যালোচনা করবে কমিশনের ওই প্রতিনিধিদল। বিএলওদের কাজ খতিয়ে দেখবে তারা।

মঙ্গলবার থেকে শুরু করে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমেরেশন ফর্ম দেওয়া হবে ভোটারদের। প্রযুক্তিগত সমস্যা মিটে গেলে রাজ্যের বাইরে থাকা ভোটারেরা অনলাইনেও ফর্ম ভরতে পারবেন। এর পরে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এই তালিকা নিয়ে অভিযোগ থাকলে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে অভিযোগ শোনা এবং খতিয়ে দেখার কাজ। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।

এসআইআরকে কেন্দ্র করে রাজ্যবাসীর একাংশের মনে ইতিমধ্যে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। এসআইআর ঘিরে এই আতঙ্ক তৈরির প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতার রাস্তায় নামছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতার রেড রোডে বিআর অম্বেডকের মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু হবে। শেষ হবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কাছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়— উভয়েই হাঁটবেন এই প্রতিবাদ মিছিলে। মিছিল শেষে বক্তৃতাও করবেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement