Ecology

কেউ কথা রাখেনি, পরিবেশ তাই আজ বিপন্ন

মানুষের অবিবেচক জীবন যাত্রাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রধান অন্তরায়।

Advertisement

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২১ ০৪:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার নিরিখে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন একটি করে পরিবেশ বার্তা ঘোষিত হয়। ওই বছর থেকে বহু বার্তা এসেছে পৃথিবীর প্রাণময়তাকে রক্ষার জন্য। যদিও পরিবেশের ভারসাম্য আজ প্রশ্নের মুখে।

Advertisement

মানুষের অবিবেচক জীবন যাত্রা সেই ভারসাম্য রক্ষায় প্রধান অন্তরায়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বার্তা উপেক্ষিত। স্থলে-জলে-অন্তরীক্ষে তারই বিষময় ফল আজ পৃথিবীর সর্বাঙ্গে। দু’শো কোটি মানুষ জলের অভাবে মৃত্যুমুখে। ক্রমাগত যুদ্ধ ও তার প্রস্তুতিতে পৃথিবী জুড়ে দূষণের দাপাদাপি।

১৯৭৪ সালে পরিবেশ বার্তায় ঘোষিত হয় ‘পৃথিবী একটি’। পৃথিবীর সবুজতাকে ধরে রাখতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। ২০০০ সালে বার্তা এল, ‘পৃথিবীকে একটি সুযোগ দাও’। কিন্তু পৃথিবীর সবুজ ঢেকেছে ধূসরতায়।

Advertisement

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বার্তায় সূচিত হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্যের সমাধানসূত্র। গৃহীত হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যে রাসায়নিক ব্যবহার না করা, শান্তি ও নিঃশ্বাস নেওয়ার তাগিদে গাছ লাগানোর অভিযান-সহ বহু কর্মসূচি। এই বছরের পরিবেশ বার্তা— ‘বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার’। কিন্তু প্রকৃতি আক্রান্ত হওয়ায় বিপন্নতা আজ দোরগোড়ায়। বিশ্ব পরিবেশ সঙ্কটের মোকাবিলা আজ বিজ্ঞানের প্রধান বিষয়। প্রয়োজন এক নতুন সামগ্রিক জীবনদর্শনের, যা মানুষকে দেখবে জল-মাটি-হাওয়া এবং জীববৈচিত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে।

১৯২২ সালে বিশ্বভারতীর সম্মেলনী অভিভাষণে রবীন্দ্রনাথ বলছিলেন, ‘‘.... আমরা মাটি থেকে উৎপন্ন আমাদের যা-কিছু প্রয়োজনীয় পদার্থ যে পরিমাণে লাভ করছি মাটিকে সে পরিমাণে ফিরিয়ে না দিয়ে তাকে দরিদ্র করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে একটা কথা আছে যে সংসারটা একটা চক্রের মতো। আমাদের জীবনের, আমাদের সংসারের গতি চক্রপথে চলে। মাটি থেকে যে প্রাণের উৎস উৎসারিত হচ্ছে তা যদি চক্রপথে মাটিতে না ফেরে, তবে তাতে প্রাণকে আঘাত করা হয়। পৃথিবীর নদী বা সমুদ্র থেকে জল বাষ্পাকারে উপরে উঠে, তার পর আকাশে তা মেঘের আকার ধারণ করে বৃষ্টিরূপে আবার নীচে নেমে আসে। যদি প্রকৃতির এই জলবাতাসের গতি বাধা পায় তবে চক্র সম্পূর্ণ হয় না, আর অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি উৎপাৎ এসে জোটে। মাটিতে ফসল ফলানো সম্বন্ধে এই চক্ররেখা পূর্ণ হচ্ছে না বলে আমাদের চাষের মাটির দারিদ্র্য বেড়ে চলছে...।’’

যদিও, বিশ্ব জুড়ে লোভাতুর মানুষের আক্রমণ শাণিত হচ্ছে পরিবেশ ভারসাম্যের উপর। তবে, সাধারণ মানুষ পরিবেশ দর্শনকে আশ্বস্ত করেছে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। তেলের জন্য যে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, পৃথিবীব্যাপী মানুষ তার প্রতিবাদ করেছে। শিশুরাও প্রতিবাদ করতে হাতে তুলি ধরেছে। ধ্বংসের বিরুদ্ধে পাল্টা জনমত তৈরি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী, যা ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আগামীদিনে গঙ্গা, পদ্মা, ভলগা, টেমস হয়ে ইয়াং সি কিয়াং আর সিন নদী থেকে হাডসন, আমাজনের জলে প্রতিফলিত হবে পরিবেশ দর্শনের জীবনের ছবি।

পরিবেশ ও সমাজকর্মী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন