Uttarpara

বর্জ্য পোড়া ধোঁয়ার চোটে তাতল মাখলা

অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে মাখলায় উত্তরপাড়া পুরসভার কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পের পাশে বর্জ্যের স্তূপে কে বা কারা আগুন লাগায়।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:১০
Share:

লেলিহান: উত্তরপাড়া পুরসভার কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পের পাশে বর্জ্যের স্তূপে আগুন। শুক্রবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র

আবর্জনায় আগুনের জেরে শুক্রবার রাতে উত্তরপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ নাজেহাল হলেন। কেউ ধোঁয়ায় হাঁসফাঁস করলেন, কেউ ভুগলেন শ্বাসকষ্টে। রাস্তা অবরোধ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলল। পুর প্রতিনিধির বাড়িতে হামলারও চেষ্টা হল। পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি সামলায়। কালো ধোঁয়া পাশের হাওড়া জেলার বালি, জয়পুরের আকাশও ছেয়ে ফেলে। শেষ রাতে আগুন আয়ত্তে এলেও শনিবার সকালেও কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছাই ছড়ায়।

Advertisement

অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে মাখলায় উত্তরপাড়া পুরসভার কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পের পাশে বর্জ্যের স্তূপে কে বা কারা আগুন লাগায়। দমকল পৌঁছনোর আগেই ধোঁয়া মাত্রাছাড়া হয়। অভিযোগ, তীব্র ধোঁয়ায় রাস্তাঘাট ঢেকে যায়। চোখমুখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট হয়। অ্যাডিনোভাইরাসের হানাদারির সময়ে এই পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে অভিভাবকদের। জনতার ক্ষোভ বেশিক্ষণ চাপা থাকেনি। টিএন মুখার্জি রোড অবরোধ করেন এলাকাবাসী। জনবহুল জায়গা থেকে ওই প্রকল্প সরানোর দাবি ওঠে।

অভিযোগ, এর মাঝেই বিক্ষোভকারীদের একটি দল লাঠি-বাঁশ নিয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের (ডাম্পিং গ্রাউন্ড এখানেই) পুর প্রতিনিধি (কাউন্সিলর) ইন্দ্রজিৎ ঘোষের বাড়িতে চড়াও হয়। পাশের ক্লাবেও যায় মারমুখী লোকজন। ইন্দ্রজিৎ ওই ক্লাবের কর্মকর্তা। পরে উত্তরপাড়া এবং ডানকুনি থানার বাড়তি বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। মাঝরাতে এসিপি (৩) আলি রাজার নেতৃত্বেও বাহিনী যায়। তার পরেই অবরোধ ওঠে।

Advertisement

স্থানীয় এক মহিলার ক্ষোভ, ‘‘পুরসভার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের কাছেই বাচ্চাদের স্কুল। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সারাদিন আবর্জনার গাড়ি যায়। প্রকল্পের দুর্গন্ধ তো আছেই।’’ প্রবীণ বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই প্রকল্প থেকে চতুর্দিকে কটূ গন্ধ ছড়ায়। ধোঁয়ায় তো ভয়াবহ অবস্থা হল। এমন যাতে না হয়, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা করুন।’’

উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে খবর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কয়েক জন গিয়েছিলেন। সাময়িক পর্যবেক্ষণের পরে প্রত্যেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ধোঁয়ায় আতঙ্কিত হয়েও অনেকে যান। মহমায়া হাসপাতালের সুপার শুভদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেকেরই চোখমুখ জ্বালা, শ্বাস নিতে সমস্যা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালে ৪-৫ জন আসেন। অক্সিজেন দিই। কাউকে ভর্তি রাখতে হয়নি।’’ চিকিৎসক ঐশ্বর্যদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ছোটদের নিরাপদে রাখতে কী করণীয়, অনেকেই ফোনে পরামর্শ চান। অ্যাডিনোভাইরাসে এমনিতেই শ্বাসের সমস্যা হয়। ওই ধোঁয়া বাচ্চাদের পক্ষে ক্ষতিকর। অনেককে নেবুলাইজ়ার দিতে হয়েছে।’’

ঘটনাস্থলে শনিবার সকালে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। প্রকল্প থেকে পুরসভার বর্জ্যের গাড়ি বের করতে বাধা দেন স্থানীয়েরা। পুলিশের মধ্যস্থতায় গাড়ি বেরোয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের হাতে স্মরকলিপি দেন।

পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের বক্তব্য, ‘‘ধোঁয়ায় মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, এটা ঠিক। দমকল, পুলিশের সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে রাতভর আমরাও ছিলাম। কাউন্সিলরের বাড়িতে, ক্লাবে চড়াও হওয়া উত্তরপাড়াবাসী বরদাস্ত করবেন না। এর পিছনে একটি রাজনৈতিক দলের উস্কানি ছিল।’’ বিজেপি নেতা তাপস দেব বলেন, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত বিক্ষোভ হয়েছে। পরিষেবা নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তাই, দল-মত নির্বিশেষে মানুষ পথে নেমেছেন।’’

পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, যেখানে আগুন লাগে, সেই জায়গাটি প্রোমোটারি ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যক্তির। ফের এই ধরনের ঘটনা আটকাতে কী করণীয়? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের কোনও বক্তব্য থাকলে, তা নিয়ে আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে হবে। প্রয়োজনে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কাজে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া যেতে পারে।’’ ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘মানুষের সমস্যা নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল। সমস্যা মেটাতে পুর-কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে ব্যবস্থা নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন