Crime

ডাকেনি পোষ্য, সূত্র ধরে ব্যাঁটরায় ডাকাতির কিনারা

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জনের বাড়িতে কুকুর থাকায় সে জানত কুকুরকে কী ভাবে বশে আনতে হয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৬:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডাকাতির সময়ে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে পোষা কুকুরের নাম ধরে ডেকেছিল। পোষ্যটি না চেঁচিয়ে, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এক দুষ্কৃতীর হাতে আদরও খেয়েছিল। মূলত সেই সূত্র ধরেই গত ২৫ জুন বিকেলে হাওড়ার ব্যাঁটরা এলাকার হৃদয়কৃষ্ণ ব্যানার্জি লেনে একটি ডাকাতির কিনারা করল পুলিশ। ধরা পড়ল ঘটনার মূল দুই চক্রী। যারা ওই পরিবারের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাড়ির চালক ও কর্মী। ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুই দুষ্কৃতী অবশ্য পলাতক।

Advertisement

গত ২৫ জুন বিকেলে গৃহকর্তা গৌতম পাল ও ছেলে সম্রাট পাল বাড়িতে ছিলেন না। তাঁরা তাঁদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলেন। বাড়িতে একা ছিলেন গৌতমবাবুর স্ত্রী সান্ত্বনা পাল। তেতলা বাড়ির দোতলার ঘরে টিভি দেখছিলেন তিনি। তখনই দুই দুষ্কৃতী বাড়ির সদর দরজা খুলে সোজা দোতলায় উঠে যায়। গৃহকর্ত্রীকে জানায়, ‘স্যর’ পাঠিয়েছেন। এর পরে বাড়ির পোষ্যকে নাম ধরে ডেকে আদর করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সান্ত্বনাদেবীকে পিছমোড়া করে বেঁধে, গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে আলমারি ভেঙে লক্ষাধিক টাকার গয়না ও কয়েক হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় তারা।

শহরের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ভাবে ডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অপরিচিত দু’জন বাড়ির মধ্যে ঢুকে এলেও চিৎকার না করে পোষ্যটি দুষ্কৃতীদের হাতে আদর খেয়েছে। সেই শুনে পুলিশের সন্দেহ হয়, পরিচিত লোকজনই এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্তমান ও পুরনো কর্মীদের মোবাইলের কল রেকর্ড ঘেঁটে পুলিশের সন্দেহ ঠিক প্রমাণিত হয়। পুলিশ জানতে পারে, ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত সেখানকার দুই কর্মী। গ্রেফতার করা হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাড়ির চালক ধর্মেন্দ্র দাস ও এক পুরনো কর্মচারী শুভজিৎ সামন্তকে। পুলিশ জানায়, তারা দু’জনে মিলে ডাকাতির ছক কষেছিল। এর জন্য বালেশ্বরের বাসিন্দা ধমের্ন্দ্র তার দুই আত্মীয়কে কাজে লাগায়।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ফোনে ধর্মেন্দ্র আর শুভজিতের সঙ্গে অন্য দু’জনের নিয়মিত কথা হত। এমনকি, ডাকাতির এক মাস আগে ওই দুই আত্মীয়কে হাওড়ার একটি বাড়িতে রেখে ডাকাতির মহড়া দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে। এর পরে সুযোগ বুঝে ১৫ জুন ধর্মেন্দ্রর দুই আত্মীয় গৌতমবাবুর বাড়িতে হানা দেয়। ডাকাতির পরেই তারা গা-ঢাকা দেয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জনের বাড়িতে কুকুর থাকায় সে জানত কুকুরকে কী ভাবে বশে আনতে হয়। বালেশ্বরের ওই ব্যক্তিই আগে থেকে কুকুরের নাম জেনে ঘটনার দিন পোষ্যটিকে ডেকে নিয়ে চুপ করিয়ে রাখে। পুলিশের দাবি, এই সূত্রটিই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ডাকাতির কিনারা করতে তাদের সাহায্য করেছে।

পুলিশ জানায়, শুভজিতের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেই ব্যাঁটরা থানায় সিটি স্ক্যান করানোর নামে মহিলাদের যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ রয়েছে। আদালতের নির্দেশে ধৃতদের আট দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। দু’জনকে হেফাজতে রেখে বেশ কিছু গয়না উদ্ধার করেছে পুলিশ। পলাতক দু’জনকে ধরা এবং বাকি গয়না ও টাকা উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে বলে সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন