Stubble Burning

নাড়ায় আগুন, ছড়াচ্ছে দূষণ

চাষিদের এই প্রবণতা বন্ধে কৃষি দফতরের চেষ্টার কোনও কসুর নেই বলে দাবি করেছেন হুগলির উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সন্দীপ দে।

Advertisement

পীষূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৮:০১
Share:

আলু চাষের মরসুম আসছে। প্রতি বারের মতোই হুগলির গ্রামাঞ্চলে ফের ধানখেত থেQQকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশ ছাইছে। শুরু হয়ে গিয়েছে নাড়া (ধান কাটার পরে গাছের গোড়ার অবশিষ্ট অংশ) পোড়ানো। কৃষি দফতরের সচেতনতা প্রচার, আদালতের নির্দেশ— সবই সার।

Advertisement

বাগোঘাট-২ ব্লকের মুল্লুক, শ্যামবাজার, বদনগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় জমিতে নাড়া পোড়ানো শুরু হয়েছে। সপ্তাহখানেক হয়ে গেল আরামবাগ মহকুমার পুরশুড়া এবং আরমগ ব্লক এলাকার বিভিন্ন মাঠেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে। কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রে আমন ধান কেটে ঘরে তোলার পর জমিতে পড়ে থাকা অবশিষ্ট গাছের গোড়া এবং এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা শিশিরে ভেজা খড় তথা নাড়া পোড়াচ্ছেন চাষিরা। দীর্ঘক্ষণ ধরে ধোঁয়ায় ভরে থাকছে এলাকা।

ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা। গোঘাটের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সুকান্ত মজুমদার এবং আরামবাগেরএকটি পরিবেশ সংগঠনের সম্পাদক মঙ্গল সাউয়ের অভিযোগ, কৃষি দফতর থেকে লিফলেট, ব্যানার, হোর্ডিং লাগিয়ে সচেতনতা প্রচার হলেও প্রত্যক্ষ নজরদারি নেই। উদাসীন ব্লক প্রশাসনগুলিও। দোষী চাষিদের বিরুদ্ধে কড়া আইনগত পদক্ষেপ না করাতেই নাড়া পোড়ানো বন্ধ হচ্ছে না।

Advertisement

চাষিদের এই প্রবণতা বন্ধে কৃষি দফতরের চেষ্টার কোনও কসুর নেই বলে দাবি করেছেন হুগলির উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সন্দীপ দে। তিনি বলেন, “আমরা ধারাবাহিক ভাবে মাইকে প্রচার, লিফলেট বিলি এবং চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করে সচেতন করছি। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। আইনগত পদক্ষেপ করার মতো জায়গায় এখনও আমরা নেই। নাড়া পোড়ানো নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় মানুষ এবং পঞ্চায়েতগুলির সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।”

কেন নাড়া পোড়ান চাষিরা?

আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে দ্রুত আলু চাষ শুরু করতেই নাড়া পোড়ানোর ধূম বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বা শেষ সপ্তাহ থেকেই আলু লাগানো শুরু হয়। তাতেই তড়িঘড়ি জমি পরিষ্কার করতে অবাধে নাড়া পোড়াতে হচ্ছে বলে স্বীকারও করেছেন চাষিরা।

গোঘাটের বদনগঞ্জের চাষিশেখ আমির আলি, পুরশুড়ার কেলেপাড়ার বাপ্পাদিত্য ধোলে, আরামবাগের রামনগরের বিদ্যাপতি বাড়ুই প্রমুখ জানিয়েছেন, আমানধান তোলার পর আলু চাষে এতকম সময় হাতে থাকে যে নাড়া পোড়ানো ছাড়া উপায় নেই। কৃষি দফতর যে সব যন্ত্র ব্যবহার করে নাড়া পরিষ্কার বা ওই জাতীয় পরামর্শ দিচ্ছে, তা স্থানীয় স্তরে অমিল। তা ছাড়া, জেলায় চালু আম্রপালি বা স্বর্ণমাসুরি ধান ফলতে১৪০-১৪৫ দিন সময় নেয়।তা কাটতে নভেম্বরের ২০-২২তারিখ হয়ে যায়। এ দিকে, আলুর ভাল ফলন পেতে গেলে নভেম্বর মাসের মধ্যেইআলু লাগানোর কাজ করে ফেলতে হয়। দেরি হলে আলু নাবিধসারোগে নষ্ট হয়।

এ ছাড়াও আর্থিক দিকের কথাও তুলেছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, যন্ত্রে ধান কাটলে বিঘাপিছু অন্তত ৪ হাজার টাকা কম খরচ হয়। কাস্তেতে ধান কাটা, তা জড়ো করে খামারে বয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তা ঝাড়ার খরচ থেকে রেহাই মেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন