Coronavirus in West Bengal: করোনাকালে নেই পড়ুয়া, সঞ্চয়ে হাত গৃহশিক্ষকের

নিজেকে অসংগঠিত শ্রমিকের গোত্রেও ফেলতে পারেন না প্রৌঢ় গৃহশিক্ষক।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ০৭:০৩
Share:

করোনা পরিস্থিতিতে কমছে পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র।

তাঁর কোচিং সেন্টারের পড়ুয়ার সংখ্যা কার্যত শূন্যে নেমেছে। করোনা কী ভাবে আমজনতার রোজগারে থাবা বসিয়েছে, শ্রীরামপুরের শশীভূষণ ঘোষ লেনের (তৃতীয় বাই লেন) মানিক দেবনাথ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন। সংসার চালাতে হাত পড়েছে ব্যাঙ্কের সঞ্চয়ে।

Advertisement

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গৃহশিক্ষকতার সুবাদে এলাকায় তিনি ‘মানিক স্যার’ নামেই পরিচিত। সপ্তম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ইংরেজি পড়ান। এক সময় শতাধিক ছাত্রছাত্রী ছিল। আয় ছিল ২০ হাজার টাকার বেশি। বছর দশেক ধরে একটু একটু করে কমতে থাকে পড়ুয়ার সংখ্যা। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, এক শ্রেণির স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে ছাত্র পড়ানোর প্রবণতাই এর কারণ। সরকারি প্রচুর টাকা বেতন পেয়েও তাঁদের এই মানসিকতায় শুধুই গৃহশিক্ষকতার উপরে নির্ভরশীলদের রোজগার কমে। তবে, তাতেও ছাপোষা মানুষটি চালিয়ে নিতে পারছিলেন।

কিন্তু, করোনা সব তছনছ করে দেয়।

Advertisement

মানিকবাবু জানান, গত বছরের গোড়ায় ৮০-৯০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। লকডাউন-পর্বে সেই সংখ্যা শূন্যে নামে। ওই বছরের জুলাই থেকে ফের দু’এক জন করে ছাত্রছাত্রী আসতে শুরু করে। চলতি বছরের শুরুর দিক পর্যন্ত জনা ৬০-৭০ পড়ুয়া ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এপ্রিল থেকে আবার পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে ঠেকে।

মানিকবাবু বলেন, ‘‘গত দেড় বছরে কয়েক মাস এক পয়সাও রোজগার হয়নি। কোনও মাসে ৫ হাজার, কোনও মাসে ৮ হাজার এসেছে। গত কয়েক মাসে আবার শূন্য। এখন হাতেগোনা কয়েকজন পড়তে আসছে। তাতে মাসে হাজার তিনেক টাকাও হবে না।’’

এই অবস্থায় দোকান-বাজারে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। ভাত-ডাল-আনাজেই চলছে বেশির ভাগ দিন। বাড়িতে জায়গা না-থাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তিনি পড়ান। রোজগার না থাকলেও সেই ভাড়া বাবদ মাসে ১৮০০ টাকা গুনতে হয়। নিজেকে অসংগঠিত শ্রমিকের গোত্রেও ফেলতে পারেন না প্রৌঢ় গৃহশিক্ষক। তাঁর খেদ, ‘‘ওঁদের জন্যও সরকারি সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে। নানা ক্ষেত্রের মানুষ ভাতা পান। আমরা কোনও তালিকাতেই নেই।’’

মানিকবাবুর মতোই অসুবিধায় পড়া নানা মানুষের কথা উঠে এসেছে আরএসপি-র সাম্প্রতিক একটি অর্থনৈতিক সমীক্ষায়। বাম দলটি শ্রীরামপুরের ১০০ জনের উপরে এই সমীক্ষা করে। তাতে আর্থ-সামাজিক অবস্থার যে ছবি উঠে এসেছে, তা আশাব্যঞ্জক নয় বলে ওই দলের নেতাদের বক্তব্য।

সমীক্ষায় স্পষ্ট, অতিমারিতে বহু মানুষের আয় সাঙ্ঘাতিক ভাবে কমেছে। কারখানার শ্রমিক, বেসরকারি সংস্থার কর্মী, পরিবহণকর্মী, নির্মাণকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবস্থা করুণ। দোকানের কর্মচারী, কারখানার শ্রমিক, অনুষ্ঠান বাড়িতে কাজ করা লোক পেশা বদলে আনাজ বিক্রি করছেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় রেল স্টেশন লাগোয়া সাইকেল গ্যারাজের কর্মী রোজগার হারিয়েছেন। সমীক্ষার রিপোর্ট-সহ স্মারকলিপি শ্রীরামপুর পুরসভায় জমা দিয়েছে আরএসপি।

আরএসপি সূত্রের খবর, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য সঙ্কট বাড়িয়েছে বলে প্রায় সকলেরই অভিমত। এই অবস্থায় রেশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজার উপর সওয়াল করছেন আরএসপি-র জেলা সম্পাদক মৃন্ময় সেনগুপ্তও। তাঁর কথায়, ‘‘হরেক কার্ডের ভেদাভেদ না করে সব মানুষকে স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়া হোক। শুধু চাল-গম নয়, পুষ্টিকর অন্য খাবারও দেওয়া হোক। মানুষের রুজি-রুটির সংস্থানের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে।’’

ভবিষ্যতে অর্থনীতি আমজনতাকে কোথায় দাঁড় করায়, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement