প্রতীকী ছবি।
প্ল্যাটফর্মে বছর তিরিশের এক যুবকের দেহ পড়ে। পরনে হাফ প্যান্ট এবং ফুলহাতা জামা। গামছা দিয়ে হাত বাঁধা স্টেশনের নাম লেখা বোর্ডের খুঁটিতে। মঙ্গলবার সকালে পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার খন্যান স্টেশনে এ ছবি দেখলেন অনেকেই। কেন রেল পুলিশ দেহ উদ্ধার করছে না, এ প্রশ্নও উঠল। শেষমেশ খবর দেওয়ার আড়াই ঘণ্টা পরে, রেল পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় বলে অভিযোগ উঠল।
রাত পর্যন্ত মৃতের পরিচয় জানা যায়নি। তদন্তকারীদের অনুমান, তাঁকে লাঠিপেটা করে মেরে ফেলা হয়। তাঁর গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে রেল পুলিশ জানিয়েছে। দেহ উদ্ধারে দেরি বা গড়িমসির কথা রেল পুলিশ মানেনি। হাওড়া রেল পুলিশ সুপার পঙ্কজকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশকে তদন্ত করতে হয়, মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক। স্টেশন ম্যানেজারের রিপোর্ট, দেহের ভিডিয়োগ্রাফি— সবই করা হয়েছে। তদন্তে যতটা সময় লাগার, লেগেছে।’’
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, খন্যানের স্টেশন ম্যানেজারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। রাত পর্যন্ত কেউ অবশ্য গ্রেফতার হয়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ভোরে দু’তিন জন মিলে ওই যুবককে মারধর করে। সকাল ৭টা নাগাদ স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওই যুবকের দেহ পড়ে থাকতে দেখে যাত্রীরা ব্যান্ডেল জিআরপি থানায় খবর দেন। জিআরপি সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পৌঁছে খন্যান উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেহ নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতালে দেহ রেখে রেল পুলিশের কর্মীরা চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকাবাসী জিআরপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। জিআরপি বেলা ১২টা নাগাদ ময়নতদন্তের জন্য দেহটি চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়।
খন্যানের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেহ রেখে জিআরপি কর্মীরা চলে যেতে চাইছিলেন। ওঁরা বলছিলেন, রাজ্য পুলিশের এলাকায় ঘটনা ঘটেছে। পান্ডুয়া থানা তদন্ত করবে। আমরা প্রতিবাদ করে বলি, দেহ ছিল প্ল্যাটফর্মে। ফলে, রেল পুলিশেরই তদন্ত করার কথা। এর পরে ওঁরা দেহ ময়নাতদন্তে পাঠান।’’ শান্তনু সরকার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘জিআরপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে দেহ রেখে অকারণে সময় নষ্ট করছিল।’’ পান্ডুয়া থানা জানায়, প্ল্যাটফর্মে ঘটনাটি ঘটেছে। ফলে তদন্তের দায়িত্ব রেল পুলিশেরই। স্থানীয় এক চা বিক্রেতা বলেন, ‘‘রাতে প্ল্যাটফর্মে রেল পুলিশের দেখা মেলে না। ভোরেও ছিল না। থাকলে প্ল্যাটফর্মের উপরে এই ঘটনা ঘটত না।’’