চন্দননগরে স্ট্র্যান্ডের রাস্তায় ধস। ছবি: তাপস ঘোষ
কয়েক বছরের ব্যবধানে ফের ধস নামল চন্দননগরের স্ট্র্যান্ডের রাস্তায়। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনার জেরে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা ওই রাস্তায় ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি তুলেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে গঙ্গাপাড়ের ঐতিহ্যশালী বিভিন্ন ভবন ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভার প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। শীঘ্রই ওই জায়গা মেরামত শুরু হবে। ফরাসি আমলে তৈরি ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার কারণে ধস নামছে। আগেও এক বার ধস নেমেছিল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তা মেরামত করা হয়েছিল।’’ ওই রাস্তায় ভারী গাড়ি চলাচল নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ দিন সকালে স্ট্র্যান্ডের জোড়াঘাটের কাছে রাস্তায় ৪ ফুট জায়গা জুড়ে প্রায় ৭ ফুট গভীর ধস নামে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই জায়গা দিয়ে একটি বড় ট্রাক যাওয়ার পরেই এই বিপত্তি। পরে ধস আরও কিছুটা বাড়ে। বিপদ বুঝে সাধারণ মানুষ বিষয়টি পুলিশ এবং পুর-কর্তৃপক্ষকে জানান। পুলিশের তরফে ব্যারিকেড করে জায়গাটি ঘিরে ফেলা হয়। ওই জায়গায় একাধিক স্কুল, চন্দননগর কলেজ, আদালত, থানা, রবীন্দ্রভবন, ফরাসি মিউজিয়াম-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ভবন রয়েছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী-সহ বহু মানুষ দিনভর ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পরে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে ফরাসি আমলে তৈরি নিকাশি নালা গঙ্গামুখে বয়ে গিয়েছে। সেই নালার উপর দিয়ে রাস্তা রয়েছে। তার ফলে, ভারী গাড়ি চলাচল করলে রাস্তা ফেটে ধস নামে। কয়েক বছর আগে এই এলাকাতেই ধস নেমেছিল। পুরসভার তরফে ধসের জায়গা বালি দিয়ে ভর্তি করে মেরামত করা হয়।
এর আগে গঙ্গার ভাঙনের জেরে স্ট্র্যান্ডের কাছেই হাটখোলায় একাধিক আবাসন, বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্ট্র্যান্ডে ঐতিহ্যশালী পাতালবাড়ি ধসের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফের এমন ঘটনা ঘটায় এলাকায় আতঙ্ক বেড়েছে।
এলাকাবাসীর একাংশের ক্ষোভ, ফরাসি আমলের তৈরি ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা ঠিকমতো সংস্কার না হওয়াতেই এই পরিস্থিতি। অবিলম্বে ওই সব নালা সংস্কারের দাবি তুলছেন তাঁরা। শৈবাল বসু নামে শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই ধস নেমে বিপদ ঘটছে। এই বিপদ এড়াতে ঐতিহ্যের এই শহরকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।’’ এই শহরেরই বাসিন্দা তথা পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘স্ট্র্যান্ড এলাকায় ভূগর্ভস্থ চারটি নিকাশি নালা গিয়েছে। ঠিকমতো সংস্কারের অভাবে মাঝেমধ্যেই ধস নামছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এই নালাগুলি সংস্কার করা না হলে আগামী দিনে শহরের বিভিন্ন এলাকা ধসের কবলে পড়বে।’’
পাশের শহর চুঁচুড়াতেও গঙ্গাপাড়ের রাস্তায় ধস নামার ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক অতীতে।