Serampore

সাজগোজ সার, কবে সারবে ‘রেফার’ রোগ?

ক্ষমতার পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালের খোলনলচে বদলানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৮
Share:

শ্রীরামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

এই শহরকে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। দিন কয়েক আগে এই রোগে জোড়া-মৃত্যু দেখেছে সে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ এই মহকুমা শহরেই রয়েছে ঝাঁ-চকচকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। তবু শহরবাসীর আক্ষেপ, ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসায় এখনও সেই হাসপাতাল কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের এখান থেকে রেফার করে দেওয়া হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। শুধু ডেঙ্গি নয়, এই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অন্য রোগের চিকিৎসাও ঠিক মেলে না বলে অভিযোগ। রোগী ভর্তি না করা এবং রোগী স্থানান্তরের সাবেক রোগ থেকে আজও এই হাসপাতাল মাথা তুলতে পারেনি।

Advertisement

ক্ষমতার পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালের খোলনলচে বদলানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়। শ্রীরামপুর শহরেও সাবেক ওয়ালস মহকুমা হাসপাতালের পাশেই সরকারি জমিতে গড়ে তোলা হয় একটি সাত তলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। ভৌগোলিক ভাবে এই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালটির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু শ্রীরামপুর বা হুগলি নয়। গঙ্গার ওপারে লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়, কাঁকিনাড়া, খড়দহ-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও বহু রোগী আসেন। মোট ৫৫ কোটি টাকা খরচ করে সাড়ে তিনশো শয্যার এই হাসপাতালে কী নেই! চারটি আধুনিক ওটি, পোর্টেবেল ইসিজি, এক্স-রে, ডেঙ্গি পরীক্ষার যন্ত্র, ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক, আইসিসিইউ-সহ প্রয়োজনীয় সব পরিকাঠামোই হাজির। ৩৬ থেকে চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৮।

কিন্তু শহরবাসীর অভিযোগ, এত পরিকাঠামো সত্ত্বেও ঠিক চিকিৎসা মেলে না। সেখানে হার্ট, হেমাটোলজি, কিডনি, রিউমেটিক, গ্যাসট্রো, ডায়াবেটিক, মানসিক রোগীর চিকিৎসার সুব্যবস্থা আজও নেই। প্রসূতিদের সিজ়ার বাদে একটু জটিল পরিস্থিতি হলেই কলকাতায় স্থানান্তরিত করে দেওয়াটাই দস্তুর। শহরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সাধারণ ডেঙ্গিতেই শহরে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। সেটা এই হাসপাতাল সামলাতে পারল না কেন? কেন রোগীদের কলকাতায় রেফারকরতে হল?’’

Advertisement

হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাম নেতা তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সদ্য প্রাক্তন সদস্য সুমঙ্গল সিংহও। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এই হাসপাতালের মান সেই পর্যায়ে উঠল কোথায়? রোগীর উদ্বিগ্ন পরিজনরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। চিকিৎসকরা কথা বলেন না। অথচ এখানে উন্নত প্রযুক্তির পাবলিক অ্যাড্রেস ব্যবস্থা রয়েছে। নামে নয়, কাজে সুপার হোক হাসপাতাল।’’

হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান গিরিধারি সাহার দাবি, ‘‘হাসপাতালের পরিকাঠামোর অনেক উন্নতি হয়েছে। ফাঁকটুকু শীঘ্রই ভরাট করা হবে। বিরোধীদের কাজ ভুল ধরা। আর আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি তা শুধরে নিতে।’’

শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালের সুপার প্রণবেশ সান্যালই দায়িত্বে রয়েছেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। শিশু, প্রসূতি-সহ অন্যান্য বিভাগে ভাল কাজ হয়। গত কয়েক বছরে রোগীর চাপ বেড়েছে অনেক। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে মানুষ বাড়তি পরিষেবা আশা করেন। এখানে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন। তাই তাঁরা ভরসা করে আসছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন