library

Library: এলাকাবাসীর বই জমিয়ে সাজছে গ্রামীণ গ্রন্থাগার

যে সব গ্রামবাসী এই গ্রন্থাগার গড়ছেন তাঁদের অন্যতম সৌরভ দত্ত জানান, সরকারি গ্রন্থাগারটিতে গ্রন্থাগারিক নেই।

Advertisement

নুরুল আবসার

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২২ ০৭:৪৮
Share:

চলছে গ্রন্থাগারের প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।

তাঁদের নিজেদের বাড়িতে জমে গিয়েছিল বইয়ের পাহাড়। সেই সব বই এক জায়গায় জড়ো করে গ্রামেরই কয়েকজন তৈরি করে ফেলেছেন আস্ত একটা গ্রন্থাগার। ছবিটা জগৎবল্লভপুরের মাজু গ্রামের। স্থানীয় শিক্ষাবিদ তথা মাজু আরএনবসু হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বরদাপ্রসাদ বসুর স্মরণে এই গ্রন্থাগারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাজু বরদা গ্রন্থাগার।’ আগামী ২৫ বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে গ্রন্থাগার খুলে দেওয়া হবে সাধারণ মানুষের জন্য।

Advertisement

এই গ্রামে আছে শতাব্দী প্রাচীন সরকারি গ্রন্থাগার। তারপরেও এখানে নতুন করে গ্রন্থাগার গড়ে তোলার যুক্তি কী?

যে সব গ্রামবাসী এই গ্রন্থাগার গড়ছেন তাঁদের অন্যতম সৌরভ দত্ত জানান, সরকারি গ্রন্থাগারটিতে গ্রন্থাগারিক নেই। তার ফলে তিন বছর ধরে বন্ধ ছিল গ্রন্থাগারটি। সপ্তাহ খানেক আগে এখানে একজন গ্রন্থাগারিক পাঠানো হয়েছে। তাও তিনি সপ্তাহে মাত্র তিনদিন গ্রন্থাগার খোলেন। সৌরভবাবুর কথায়, ‘‘যখন সরকারি গ্রন্থাগারটি টানা বন্ধ ছিল তখনই আমরা নিজেদের উদ্যোগে গ্রন্থাগার খোলার চেষ্টা করেছিলাম। এত দিনের সেটা একটা আকার পাচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা সরকারি গ্রন্থাগারটির বিপক্ষে নই। দু’টি গ্রন্থাগারই চলুক না। পড়ার তো কোনও শেষ নেই।’’

Advertisement

নতুন গ্রন্থাগার গড়ার প্রস্তাব নিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসী নিজেদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক করেন। সেখানেই কী ভাবে গ্রন্থাগার গড়া হবে সে বিষয়ে খুঁটিনাটি ঠিক হয়। উদ্যোক্তারা ঠিক করেন, তাঁরা কোনও বই কিনবেন না। অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে অনেক বই এবং সাময়িক পত্রিকা আছে। সেগুলিই তাঁরা দান করে দেবেন। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘আমার নিজের সংগ্রহেই আছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বই ও সাময়িক পত্রিকা। সেগুলি আমি গ্রন্থাগারের জন্য দান করে দিয়েছি।’’ এছাড়াও বই দান করেছেন স্থানীয় চিত্র শিল্পী প্রয়াত অলীক দাসের স্ত্রী সঙ্গীতা দাস, ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়, তুষার বসু, হারাধন চক্রবর্তী, উৎপল পাত্র সৌমেন আদিত্য- গ্রামের আরও অনেকে। এখন তাঁদের গ্রন্থাগারের ভাঁড়ারে প্রায় ১৫ হাজার বই রয়েছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য সাময়িক পত্রিকা ও লেখা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার রবীন্দ্র জন্মদিন সংখ্যা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘এক্ষণ’ পত্রিকার চারটি সংখ্যা, কৃত্তিবাস পত্রিকার তিনটি সংখ্যা, ‘আনন্দধারা’ গুরুপল্লি থেকে নিজস্ব প্যাডে লেখা আশ্রম কন্যা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গুরুদেবের শেষযাত্রা’ নামক রচনা। যেটি শান্তিনিকেতন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ‘২৫ জুলাই রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রা স্মরণ’ পত্রিকায়। সেই রচনার মূল পান্ডুলিপিও থাকবে এই গ্রন্থাগারে। সংগ্রহ করা হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে সিনেমার শ্যুটিংয়ের অনুমতি চেয়ে পরিচালক মৃণাল সেনের চিঠি। এছাড়াও থাকছে দুষ্প্রাপ্য স্কেচ, ফটোগ্রাফ এবং হাওড়া জেলার উপরে প্রকাশিত বিভিন্ন পুস্তিকা।

আপাতত গ্রন্থাগারটি করা হয়েছে সৌরভবাবুরই বাড়ির একটি দোতলা ঘরে। সৌরভবাবু পেশায় গৃহশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘সপ্তাহে তিনদিন দুপুর ২টো থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই গ্রন্থাগার খোলা থাকবে। যে কেউ বই ধার নিতে পারবেন। তবে দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহগুলি এখানে বসেই দেখতে হবে। ওই সময়ে যেহেতু আমার পড়ানো নেই তাই আমি নিজেই গ্রন্থাগারিক হিসাবে কাজ করব।’’

এখন চলছে বইগুলি সাজিয়ে রাখার কাজ। হাতে হাত মিলিয়ে কাজ সামলাচ্ছেন উদ্যোক্তারাই। বইপোকারা ভিড় জমাবেন গ্রন্থাগারে। জোর কদমে চলছে তারই প্রস্তুতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন