ফাইল চিত্র।
গত শনিবার ফেসবুকে তাঁর ‘পোস্ট’ বিতর্ক ছড়ায় বলাগড়ে শাসক দলের রাজনীতিতে। মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই পোস্ট মুছে ফেললেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।
বিধায়কের এই পদক্ষেপেও চর্চা তুঙ্গে। দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের সঙ্গে বিধায়কের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে জল্পনাও বাদ যাচ্ছে না। দলের নির্দেশে তিনি পোস্ট মুছেছেন কিনা, তা নিয়ে তৃণমূল শিবিরে গুঞ্জন রয়েছে। মনোরঞ্জনবাবুর দাবি, দল এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি। দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গেই আছেন। লেখা মোছার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার অভ্যাস। পুরনো লেখা ডিলিট করে নতুন দিই। আবার নতুন দেব।’’ বিতর্ক নিয়ে বিশদে মন্তব্য এড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সামাজিক মাধ্যমে অনেক সময় কেউ কেউ দলের নির্দেশিত বিষয়ের বাইরে কিছু লিখে ফেলেন। এ সবের উত্তর না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।’’
গত শনিবার গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতে অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগ দিতে কয়েকশো লোক আবেদনপত্র জমা দেন। ওই কর্মসূচি নিয়ে তোপ দেগে ফেসবুকে মনোরঞ্জনবাবু লেখেন— ‘তৃণমূলে লুকিয়ে থাকা বিজেপির কয়েক জন এজেন্ট অন্য বিজেপি কর্মীদের দলে ঢোকানোর চেষ্টা করেছন। এর পিছনে আর্থিক লেনদেনের বড়সড় ব্যাপার আছে, এমন শোনা যাচ্ছে’। শনিবার বলাগড়ে তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগে এবং দলের নির্দেশের বাইরে ওই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলেও পোস্টে দাবি করেন মনোরঞ্জন।
এতেই বিতর্কের শুরু। অনেকে বিধায়কের কথায় সমর্থন জানান। অনেকে বিধায়কের বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়ান। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধায়কের সীমিত সাধ্যে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কতটা লাঘব করতে পারবেন, সেই চিন্তা নিয়েও সম্প্রতি মনোরঞ্জন ফেসবুকে মন্তব্য করেছিলেন। ওই পোস্টও সরিয়ে নেওয়া হয়।
এক তৃণমূল নেতা জানান, ‘এখন থেকে বিধায়কদের পরামর্শে ব্লকের সংগঠন ও আগামী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গঠিত বা পরিচালিত হবে বলে পিকে (তৃণমূলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর) নির্দেশ দিয়েছেন’, এমন পোস্টও মনোরঞ্জনবাবু করেছিলেন। পরে দলেরই এক সাংসদ ফেসবুকে লেখেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, এই তথ্য ঠিক নয়। এই বিষয়ের পোস্টও মনোরঞ্জনবুর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও।
শনিবারের কর্মসূচিতে ছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক তথা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাঝি, দলের বলাগড় ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত প্রধান অশোক সরকার, উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ প্রমুখ। মনোরঞ্জনবাবুর পোস্ট নিয়ে আমল দিতে চাননি অসীমবাবু। বিষয়টি ‘ব্যক্তিগত অভিরুচি’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে, ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘যাঁরা ওঁকে বিধায়ক বানানোর জন্য খাটলেন, সেই কর্মীদেরই আক্রমণ করছেন! অনিয়মের প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নিন। ফেসবুকে আলপটকা মন্তব্য কেন?’’
তাঁর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটাক্ষ নিয়ে মনোরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখুন, তাঁরা সত্যিই তৃণমূল? দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নজর রাখছেন। দলই বুঝবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘একটা পোস্ট দেখলাম। তাতে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘৬০ লাখ টাকা কোথায় গেল? জবাব দেবেন বিধায়ক’? এটা তো দলীয় কর্মী লিখতে পারেন না। বিজেপি লিখতে পারে।’’
প্রতিপক্ষ শিবিরে চাপানউতোরে ‘মজা’ পাচ্ছে বিজেপি। দলের হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ। ওখানে বিধায়ক মানিয়ে নিতে পারছেন না। সত্যি কথা লিখে ফেলছেন। ঝুলি থেকে বেড়াল বেড়িয়ে পড়ছে। তবে, এ সবে বিজেপির যোগ নেই।’’