গেটে তালা ওয়েলিংটন জুটমিলে। নিজস্ব চিত্র।
চলতি বছরে অধিকাংশ সময় বন্ধ থেকেছে রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিল। বছর শেষেও তা খুলবে কি না, সেই নিশ্চয়তা মিলছে না।
হাজার দুয়েক শ্রমিক এখানে কাজ করেন। উৎপাদন চালুর সঙ্গে তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের ভালমন্দ জড়িয়ে। অভিযোগ, মিলের চাকা না গড়ানোয় খুঁড়িয়ে চলছে তাঁদের সংসার। এক শ্রমিকের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে। খেটে উৎপাদন করেছি। এখন মালিকপক্ষ নিজের ইচ্ছেয় মিল বন্ধ রাখছেন। কেউকিছু বলার নেই?’’ অন্য এক শ্রমিক বলেন, ‘‘এই বয়সে অন্য কোথাও ভাল কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। যাব কোথায়?’’
পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল রাজ্য সরকার। শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে শীঘ্রই আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করে মিল খোলার চেষ্টা করা হবে।’’
আর্থিক সঙ্কট, বেশি দামে পাট কিনতে অপারগ হওয়া, কম উৎপাদন, শ্রমিক সংগঠনের একাংশের অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিল বন্ধ করেন কর্তৃপক্ষ। জুলাইয়ের শেষে কয়েক দফায় প্রায় ১০০ শ্রমিককে নিয়ে কাজ চালু হয়। ৩ অগস্ট ফের মিল বন্ধ হয়। ফের শ্রমমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় ১৮ অক্টোবর উৎপাদন চালু হয়। কিন্তু, হাজার দুয়েক শ্রমিকের মধ্যে আড়াইশো শ্রমিকেরও কাজ জোটেনি। এ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চরমে ওঠে।
গত ৬ নভেম্বর সিইও-র আবাসনে হামলা হয়। শ্রমিকদের উপরে ওই দায় চাপিয়ে দু’দিন পরেই ফের মিলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও সদর্থক কিছু হয়নি। মিল খোলার দাবিতে দিন কয়েক আগে শ্রমমন্ত্রীকে চিঠি দেয় এআইটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন ফেডারেল চটকল মজদুর ইউনিয়ন। চিঠিতে তারা দাবি জানিয়েছে, যত দিন উৎপাদন চালু না হচ্ছে, তত দিন শ্রমিকদের ফাউলাই (বন্ধ শিল্পের শ্রমিকদের সরকারি ভাতা) প্রকল্পে ভাতা দেওয়া হোক। সংগঠনের নেতা প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বঞ্চনা করে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন।’’
মিল কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে বারেবারেই শ্রমিকদের অসহযোগিতার দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রচুর লোকসান সত্বেও তাঁরা উৎপাদন চালানোর চেষ্টা করেছেন। শ্রমিকদের অসহযোগিতায় সম্ভব হয়নি।