Illegal Sand Mining

মুণ্ডেশ্বরী থেকে বালি তোলা বন্ধ করলেন তৃণমূল নেতারা

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক সুকান্ত। তাঁর দাবি, ‘‘বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। তাতে বালি দরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৩
Share:

জয়পুরের ঘোড়বেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের আজানগাছি গ্রামে মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে তোলা বালি। নিজস্ব চিত্র

সেচ দফতরের অনুমতি নিয়ে কিছুদিন ধরে হাওড়ার জয়পুরের ঘোড়বেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের আজানগাছি গ্রামে মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে বালি তুলছিল একটি ঠিকা সংস্থা। সেই বালি নদীবাঁধ সংস্কারের কাজে লাগানো হচ্ছিল। কিন্তু বালি তোলার ফলে চাষজমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে দু’দিন আগে এলাকার চাষিদের নিয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতারা। বালি তোলায় আমতারদলীয় বিধায়ক সুকান্ত পালের মদত রয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। অবিলম্বে বালি তোলার অনুমতি প্রত্যাহার করা না হলে তাঁরা একযোগে দল এবং পঞ্চায়েতের সব পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক সুকান্ত। তাঁর দাবি, ‘‘বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। তাতে বালি দরকার। সেচ দফতর সব দিক বিবেচনা করেই বালি তোলার অনুমতিদিয়েছে। এতে আমার কোনওভূমিকা নেই। কিন্তু চাষিদের যদি ক্ষতি হয়, তা হলে বালি তোলার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। আমি সেচ দফতরকে বলব চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে। আমিও থাকব সেই আলোচনায়।’’ দলের একটা অংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন বিধায়ক।

কী বলছে সেচ দফতর?

Advertisement

দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার রঘুনাথ চক্রবর্তী বলেন, "ঠিকা সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতেই বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাদের এমন ভাবে বালি তুলতে বলা হয়েছিল,যাতে নদীর কোনও ক্ষতি না হয়। তারপরেও কেন চাষিরা জমি ধসে যাওয়ার অভিযোগ করছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলব। চাষের জমির ক্ষতি মেনে নেওয়া হবে না।’’

হাওড়া জেলায় নদী থেকে বালি তোলা এমনিতেই নিষিদ্ধ। তবে, সেচ দফতর নিজেদের কাজের প্রয়োজনে বালি তুলতে পারে। ওই দফতর সূত্রের খবর, হাওড়া জেলায় বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজে বিভিন্ন নদীবাঁধ সংস্কারে বালি প্রয়োজন হচ্ছে। দিন পনেরো আগে অনুমতিপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থা আজানগাছি গ্রামের কাছ থেকে বালি তোলা শুরু করে। নদীর বুকে যন্ত্র বসানো হয়। বালি তোলার কাজ চলতে থাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। দু’দিন আগে ওই কাজ বন্ধ করেদেওয়া হয়।

ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বাপি মল্লিক বলেন, "বালি তোলার ফলে চাষিদের ক্ষতির কথা বিধায়ককে জানিয়েছিলাম। তিনি আমাদের বালি তোলা বন্ধ করে দিতে বলেন। যেই বন্ধ করে দিলাম, বিধায়ক ফোনে বললেন, ওই কাজ বন্ধ করার জন্য পুলিশ প্রশাসন আছে। তোমরা বন্ধ করলে কেন? বিধায়কের এইসব কথার মানে বুঝতে পারছি না। কী চান উনি?’’ এই এলাকা থেকেই নির্বাচিত আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেলওয়ার হোসেন মিদ্দা বলেন, ‘‘যদি ধরেও নেওয়া হয় আইন মেনেই বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা হলেও চাষের জমির ক্ষতি করে বালি তোলা যায় কি?"

দেলওয়ারও অভিযোগ করেন, বালি তোলার অনুমতির পিছনে বিধায়কের হাত আছে। তিনি বলেন, ‘‘বালি তোলা আমরা বন্ধ করে দিলেও ওই অনুমতি প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে এই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতের এবং পঞ্চায়েত সমিতির সব সদস্য এবং পদাধিকারী এবং দলের পদাধিকারীরা এক যোগে পদত্যাগ করবেন।’’

চাষি এবং এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বালি তোলার অনুমতিতে যে সব নিয়ম মানার শর্ত দেওয়া হয়েছে, তার কোনওটিই মানেনি ঠিকা সংস্থাটি। প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি বালি তোলা হচ্ছিল। সেই বালির একটা অংশ বিক্রিও করা হচ্ছিল। সেচ দফতরের নজরদারি ছিল না। ঠিকা সংস্থার তরফ থেকে অভিযোগ অস্বীকারকরা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন