জমা জলে ধর্নায় উত্তর হাওড়ার দলের বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও কেন জলমগ্ন? এই প্রশ্ন তুলে তৃণমূলেরই পুরসভার নতুন প্রশাসক মণ্ডলীকেই কাঠগড়ায় তুললেন উত্তর হাওড়ার দলের বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। এমনকি, নতুন বোর্ডের ব্যর্থতার অভিযোগ করে জমা জলে চেয়ার পেতে ধর্নায়ও বসলেন তিনি। শুক্রবার বিধায়কের এ হেন আচরণে জেলা তৃণমূলের অন্দরে চাপানউতর শুরু হয়েছে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে গোটা ঘটনায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
গত কয়েক দিন ধরে একটানা ভারী বৃষ্টিতে হাওড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে যায়। শুক্রবার বৃষ্টি থামলেও বহু জায়গা জলমগ্ন। যার মধ্যে রয়েছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বামুনগাছি এলাকা। গত কয়েক মাস ধরে জলযন্ত্রণায় ভুগছেন বলে সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। বৃষ্টি ও নর্দমার জল মিশে গিয়ে রাস্তার পাশাপাশি তাঁদের ঘরও জলমগ্ন।
শুক্রবার পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান গৌতম। সেখানে গিয়ে জমা জলে চেয়ার পেতে ধর্নায় বসে পড়েন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে জানতে চান, ‘‘এখনও কেন জল নামছে না?’’ জল না নামলে এলাকায় বসে থাকারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। গৌতমের দাবি, ‘‘আগে জল জমলেও তা নেমে যেত। কিন্তু এখন নামছে না। পুরসভা জমা জল নামাতে ব্যর্থ। বার বার জানালেও কাজ করেননি পুর কর্তৃপক্ষ। তাই আমি নিজেই এখানে চলে এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মাসখানেক আগে হাওড়া পুরসভার নতুন প্রশাসক মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নতুন বোর্ড গঠন করে যে সম্মান দিয়েছেন, তার সুবিচার করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ বার অতি বর্ষণের ফলে সমস্যা হয়েছে। অতিরিক্ত পাম্প চালিয়ে দ্রুত জল নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ সেই সঙ্গে গৌতমকে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিধায়ক হওয়ার আগে পুরসভার মেয়র পরিষদের সদস্য ছিলেন গৌতম চৌধুরী। আগের প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। তিনি সব বিষয়ই জানেন।’’
গৌতমের এই কার্যকলাপকে ভাল ভাবে নেননি দলীয় নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও এ নিয়ে দলের অন্দরেই চাপানউতর শুরু হয়েছে। গৌতমের এই আচরণকে কার্যত দলবিরোধীই বলে মনে করছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
শুক্রবারের এই ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। হাওড়া সদরের যুব মোর্চা সভাপতি ওমপ্ৰকাশ সিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূলের পুরসভা। গৌতমবাবুও সে দলের বিধায়ক আর নিজেই পুরসভার সমালোচনা করেছেন। কী অবস্থা এই দলের!’’ তবে হাওড়া সদরের তৃণমূল সভাপতি কল্যাণ ঘোষের দাবি, ‘‘বিধায়ক কোনও আন্দোলন করেননি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষোভ যাতে না বাড়ে সে চেষ্টাই করেছেন।’’