অভিজ্ঞতাই শিক্ষক, দোকান বন্ধে ভাঙেননি উত্তম

স্বামীকে কামারপুকুর পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে খোঁজ নিতে বলেছেন পূর্ণিমা।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৭:২২
Share:

বন্ধ দোকানে বসে উত্তম রায়।

ছ’জনের পেট চলে চা দোকান চালিয়ে। কাপ বা গ্লাস পিছু ৫ টাকা দরে প্রতিদিন গড়ে ৯০-১০০জন করে খদ্দের। রবিবার থেকে সরকারি নির্দেশের জেরে দোকান খুলতে পারেননি গোঘাটের কামারপুকুর লাহাবাজারে উত্তম রায়। একটা পয়সাও আয় হয়নি। তবু ভেঙে পড়েননি বছর সাতান্নর উত্তম। বলেছেন, “গতবার লকডাউনে খুব ভুগেছি, এ বার কিছুটা গা সওয়া হয়ে গেছে।”

Advertisement

উত্তম বলেন, “এই দুঃসময়ে কিভাবে সংসার চালাতে হবে সেই সুলুক সন্ধান পরিবারের সবাই মিলেই করছি। এ বছর আবার সর্ষের তেল, ডাল, বিভিন্ন মশলা সবেরই প্রায় দ্বিগুণ দাম”। কেমন সেই সুলুক সন্ধান? উত্তমের স্ত্রী কামারপুকুর বাগদিপাড়ার পূর্ণিমা বলেছেন, “এ দিন যেমন একটা টাকাও নগদ আয় হয়নি, তেমনই সবজি, মাছ বা ডিমে একটা টাকাও খরচ করিনি। পুকুরের কলমি শাক, আর পুকুর থেকে তোলা গুগলির ঝোল রেঁধেছি। সপ্তাহ খানেকের মতো কিনে রাখা সর্ষের তেল কম খরচ করেছি। এভাবেই বাঁচতে হবে। তবে রেশনের চালটা বড় ভরসা।”

স্বামীকে কামারপুকুর পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে খোঁজ নিতে বলেছেন পূর্ণিমা। মুখ্যমন্ত্রী কামারপুকুরে সভায় এসে বলেছিলেন, পরিবারের মেয়েদের হাত খরচের জন্য ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দেবেন। সেই টাকা পেতে গেলে কোথায় আবেদন করতে হবে, সেটাই জানতে চান পূর্ণিমা। বাবার সঙ্গে চা দোকানে কাজ করা যুবক ছেলে তাপসকে জানিয়ে রেখেছেন, যে সব দোকান খোলার অনুমতি আছে, তাঁদের দোকানে গিয়ে যদি চা দিয়ে আসা যায়, তাঁরা নেবেন কিনা।

Advertisement

‘উত্তমদার চা’ –এর নাম রয়েছে কামারপুকুর লাহাবাজার এলাকায়। কয়েকজন স্থানীয় খদ্দের রবিবার সকালে এসে তাঁকে দোকানের দরজা বন্ধ করে চা করার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু উত্তম তা করেননি। উত্তম বলেন, “গতবার করোনা এবং লকডাউনের মর্ম বিশেষ বুঝিনি, কিছু লুকোছাপা করে চা বিক্রি করেছি। এ বার কোনও ঝুঁকি নিইনি। বরং গুগলি-বেগারি তুলে রান্না করে খাওয়াই ভাল। আর উপকারীও।”

তাঁর উপলব্ধি, “এটা এমন একটা পরিস্থিতি যে আমদের মতো দিন-আনি দিন-খাই লোকদের দুর্দশার জন্য কাউকে দোষ দেওয়া যাবে না। রেশনের চালের পাশাপাশি তেল, ডাল দেওয়ার ব্যবস্থা হলে অনেকটা সুরাহা হবে। প্রধানের কাছে খোঁজও নেব, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো মেয়েরা সত্যি সত্যি হাত খরচের টাকা পাবেন কিনা।”

যদিও তৃণমূল পরিচালিত কামারপুকুর পঞ্চায়েত প্রধান তপন মণ্ডল বলেন, “পরিবারের মহিলাদের হাত খরচ দেওয়া সংক্রান্ত এখন কোন সরকারি নির্দেশিকা আসেনি। বিষয়টা ব্লক এবং জেলা স্তরে খোঁজ নেব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement