তৃণমূলের ২৮টি কমিটির অনুমতিই নেই হুগলিতে

তিনি যে এই জেলার দলীয় সংগঠনের কাজকর্মে রুষ্ট, শুক্রবার তা চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠকে হুগলির নেতাদের ডেকে সতর্কও করেছেন তিনি।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০৯:৫০
Share:

হুগলি জেলায় তৃণমূলের ৩১টি ব্লক স্তরের কমিটি রয়েছে। তার মধ্যে ২৮টিই অনুমোদনহীন!

Advertisement

তিনি যে এই জেলার দলীয় সংগঠনের কাজকর্মে রুষ্ট, শুক্রবার তা চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠকে হুগলির নেতাদের ডেকে সতর্কও করেছেন তিনি। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও জেলায় সাংগঠনিক কাজকর্মে তাঁর অসন্তোষ গোপন করেননি। জেলা নেতৃত্ব যে দলীয় গঠনতন্ত্রের ধার ধারেন না, তা-ও ওই বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাতেই উঠে এসেছে ওই অনুমোদনহীন ব্লক স্তরের কমিটিগুলির কথা।

বৈঠকে দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তকে উদ্দেশ্য করে সুব্রতবাবুর প্রশ্ন, ‘‘হুগলিতে চলছেটা কী? জেলায় মাত্র তিনটি বাদে কোনও ব্লক কমিটির অনুমোদন জেলা নেতৃত্ব এ পর্যন্ত রাজ্য কমিটির থেকে নেওয়ার কোনও প্রয়োজনই বোধ করেনি?’’ রাজ্য সভাপতির এই প্রশ্নে কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে যান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সময় তপনবাবু কোনও মন্তব্য করেননি। পরে আনন্দবাজারের কাছে তিনি দাবি করেন, সব কমিটির ব্যাপারেই দলের অনুমোদন ছিল। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নতুন জেলা পর্যবেক্ষক আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তাঁর এবং রাজ্য কমিটির অনুমোদন নিয়ে নেব।’’ দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদবও বলেন, ‘‘দলের যেখানে অসঙ্গতি দেখা যাবে বা পরিবর্তনের প্রশ্ন আসবে, আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।’’

Advertisement

হুগলিতে মোট ১৮টি ব্লক। তৃণমূলের হিসেবে, দলের মোট ৩১টি ব্লক স্তরের কমিটি রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রতিটি কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে দলের জেলা কমিটি হয়ে রাজ্য কমিটির কাছে তা অনুমোদন করিয়ে নেওয়া আবশ্যক। কিন্তু হুগলিতে যে তা হয়নি, সুব্রতবাবুর উষ্মা থেকেই তা স্পষ্ট। কিন্তু কেন? দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, আদতে এটা একটা কৌশল। রাজ্য নেতৃত্বের ধরা-ছোঁয়া থেকে পালিয়ে বাঁচার। জেলার নেতারা দলে নিজস্ব গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে কমিটি তৈরি করে কিছু নেতার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেন। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ওই সব কমিটির তালিকা পাঠিয়ে অনুমোদন নিলে তাঁরা সতর্ক থাকবেন কমিটির সদস্যদের কাজ নিয়ে। কখনও সাংগঠনিক ভাবে কোনও অভিযোগ পেলে সেই তালিকা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে স্থানীয় স্তরের ওই নেতার ভূমিকা। প্রয়োজনে রাজ্য কমিটি ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু স্থানীয় কমিটিগুলির অনুমোদন না-করালে রাজ্য নেতৃত্বকে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা যায়। আর যখন যেমন খুশি নেতাদের মর্জিমাফিক কমিটির ‘মুখ’ বদলে ফেলাও যায়।

রাজ্য সভাপতির উষ্মা যে পুরোপুরি স্বাভাবিক, তা মানছেন দলের অনেক বিধায়ক, নেতা-কর্মী। তাঁরা জানান, গত পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট বিলি নিয়ে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছিল, লোকসভার ফল খারাপ হওয়া তার অন্যতম কারণ। অনেকেই উপরে দলের সঙ্গে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে দলের ক্ষতি করেছেন। ক্ষমতার মোহে দলের নেতারা সে সব দেখেননি। তপনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটের ফল ভাল হলে লোকে কিছু বলে না। খারাপ হলেই নানা কথা হয়। এখন আমাদের সকলেরই উচিত, সতর্ক থেকে এবং মন দিয়ে দলের জন্য কাজ করা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement