ঘণ্টা খানেকের আগুনে পুড়ে ছাই ৩১টি বসতি

বাগনান স্টেশনের পাশে খালোড় ঝিল পাড়ে রয়েছে প্রায় ৬১টি ঝুপ়ড়ি ঘর। গত চল্লিশ বছর ধরে গড়ে উঠেছে বসতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগনান শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৭
Share:

শেষ-আশা: পোড়া ঘর থেকে বই খোঁজার চেষ্টা। ছবি: সুব্রত জানা

ঘণ্টা খানেকের আগুন, পুড়িয়ে দিল ৩১ টি ঘর। পুড়েছে আসবাব, রান্নার সামগ্রী, টিভি, রেফ্রিজারেটর, মোটরবাইক। একটি ঘরে পুড়েছে একখানা আলমারি। ভিতরে ছিল কিছু টাকা, জমি কেনার। পুড়েছে প্রায় দু’লাখ— দাবি করেছেন আঠাশ বছরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সাবির খান।

Advertisement

বাগনান স্টেশনের পাশে খালোড় ঝিল পাড়ে রয়েছে প্রায় ৬১টি ঝুপ়ড়ি ঘর। গত চল্লিশ বছর ধরে গড়ে উঠেছে বসতি। বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ১০টা নাগাদ তারই একটি ঝুপ়ড়িতে আগুন লাগে। ছইয়ের দেওয়াল আর ত্রিপলের ছাউনি বেয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। প্রাথমিক ভাবে বাসিন্দারাই ঝিল থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে দমকলের চারটি ইঞ্জিন এসে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। যদিও ততক্ষণে ধ্বংসস্তূপ ৩১টি ঘর।

ওই ঝুপড়িতেই বড় হয়েছেন সাবির। বাবা মফিজুদ্দিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সামান্য চালের ব্যবসা করে ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি বহু বছর। সাবির একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করে কয়েক বছর আগে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন। এখনও ওই বস্তির চারটি ঘরে মা, বাবা, স্ত্রী, পুত্র, এক দিদি ও ভাগ্নেকে নিয়ে থাকতেন। তবে ভেবেছিলেন, জমি কিনে চলে যাবেন অন্যত্র। বাড়ির নকশা বানাবেন নিজের হাতে, থাকবেন একটু সুখে।

Advertisement

সাবির জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে জমির কেনার জন্য অগ্রিম দেওয়ার কথা। সেই মতো মঙ্গলবার দু’লক্ষ টাকা তুলে রেখেছিলেন ঘরের আলমারিতে। অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে পুড়েছে টাকার বান্ডিলও। এ দিন সকালে অফিসে বেরিয়েছিলেন সাবির। আগুন লাগার খবর পেয়ে ফিরে আসেন। বাবাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বার বার বলেন, ‘‘আর তোমাকে পাকা বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব না বাবা।’’

সাবির একা নন। সর্বস্ব হারিয়েছেন আরও অনেকে। কিন্তু আগুন লাগল কী করে, বলতে পারছেন না কেউ। তিন মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে সংসার লক্ষ্মী সিংহের, পেশায় আনাজ ব্যবসায়ী। সকালে তিনি বাগনান বাজারে চলে গিয়েছিলেন আনাজ বিক্রি করতে। আগুন লাগার ঘটনা শুনে ছুটে আসেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘সব তো পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। আমার ঘরটা যে কোথায় ছিল, তাই তো বুঝতে পারছি না।’’

যে জমিতে বস্তিটি গড়ে উঠেছে তার কিছুটা অংশ রেলের। কিছুটা কৃষি বিপণন দফতরের অধীন হাওড়া নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির। বাসিন্দাদের অধিকাংশ মুটে-মজুরের কাজ করে রোজগার করেন। কয়েকজন ফেরি করেন, কেউ ছোট ব্যবসা করেন। সাবির ব্যতিক্রম। ছোটরা অবশ্য সকলেই পড়াশোনা করে।

পুলিশ ও দমকলের কর্তারা জানিয়েছেন, আগুন আরও ভয়ঙ্কর হতে পারত। প্রতিটি ঘরে ছিল এলপিজি সিলিন্ডার। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বাসিন্দারা সেগুলি বের করে ঝিলের জলে ফেলে দেন। ঘটনাস্থলে আসেন বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন ও বাগনান-১ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে রাখা হবে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির তৈরি ফুল বাজারে। প্রতিটি পরিবারকে ত্রিপল দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন