পাট্টার জমিতে থাকতে এসে অথৈ জলে ৬০টি পরিবার

সরকারের কাছ থেকে পাট্টা পাওয়া জমি। সেই জমিতে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে এসে একেবারে জলে পড়েছেন প্রায় ৬০টি পরিবার। কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে জল, রাস্তা এবং বিদ্যুৎবিহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলি।

Advertisement

নুরুল আবসার

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

ভোগান্তি: এ ভাবেই জল ডিঙিয়ে নিত্য যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

সরকারের কাছ থেকে পাট্টা পাওয়া জমি। সেই জমিতে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে এসে একেবারে জলে পড়েছেন প্রায় ৬০টি পরিবার। কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে জল, রাস্তা এবং বিদ্যুৎবিহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলি। আর এই ছবি হাওড়ার সাঁকরাইলের রামচন্দ্রপুর মৌজার সুরেরডাঙায়।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকায় দু’দফায় প্রায় ১০০টি ভূমিহীন পরিবারকে গড়ে আড়াই কাঠা করে জমি পাট্টা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ‘চাষ ও বসবাসের জন্য জমি দান’ প্রকল্পে জনা পঞ্চাশেক পরিবার জমি পায়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে তৃণমূল সরকারের আমলে ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে পাট্টা দেওয়া হয়। দুটি দফা মিলিয়ে প্রায় ৬০টি পরিবার সেই জমিতে বাড়ি তৈরি করেন। কিন্তু জমি পেয়েও সমস্যা মেটেনি পরিবারগুলির। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জায়গাটি বসবাসের অযোগ্য। না রয়েছে যাতায়াতের রাস্তা না রয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা।

পাট্টা প্রাপকদের অভিযোগ, যে খাস জমিটি তাঁদের দেওয়া হয়েছে সেটি খুব নীচু। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় জল জমে থাকে মাসের পর মাস। যাঁরা বাড়ি করেছেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কোনওমতে নিজের বাস্তুভিটেটুকু উঁচু করতে পেরেছেন। বাকিদের সমস্যা একই রয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জুলাই মাস থেকে টানা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এলাকা জলে ডুবে থাকে। শুধু এখানেই শেষ নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নলকূপ না থাকায় এক কিলোমিটার দূরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কল থেকে জল আনতে যেতে হয়। বিদ্যুতের অভাবে কেরোসিন তেল দিয়ে রাতে আলো জ্বালাতে হয়। অনেকে ধারদেনা করে সৌরবিদ্যুৎ নিয়েছেন। তাতে আবার একটি বাল্ব ছাড়া কিছুই জ্বলে না।

Advertisement

সব থেকে বড় সমস্যা রাস্তা। বাসিন্দারা জানান, এই এলাকার কিছু স্থায়ী বাসিন্দা তাঁদের রাস্তার জন্য জমি দিয়েছেন। সেই জমি পঞ্চায়েতের হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই রাস্তা হয়নি।

ওই এলাকায় জমির পাট্টা পেয়েছেন অমিত সরকার। পেশায় দিনমজুর। কোনওমতে বাড়ি করলেও বাড়ির চারিদিকে এক কোমর জল। অমিতবাবুর পাঁচ বছরের ও দেড় বছরের দুটি ছেলে আছে। ছোট ছেলে সোহম দিন তিনেক ধরে ভুগছের। পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখেই ছেলেকে ওষুধ খাওয়ানো চলছে। অমিতবাবুর স্ত্রী সুমন্তিকা বললেন, ‘‘কী করব, এত জল ভেঙে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়।’’ এই পাঁচ মাস স্কুল বা অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে যাওয়াও বন্ধ মহল্লার ছেলেদের। সুমন্তিকার বড় ছেলে রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু স্কুলে যেতে পারছে না। কেউ কেউ এই পাঁচ মাস অন্যত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা, জল এবং বিদ্যুতের দাবিতে তাঁরা বারবার প্রশাশনের কাছে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি। পরিস্থিতি শোচনীয় তা স্বীকার করে সাঁকরাইলের বিডিও সন্দীপ মিশ্র বলেন, ‘‘রাস্তা, পানীয় জলের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিইএসসি। তাদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধান বের করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন