ক্যানসারকে তুড়ি মেরে মাধ্যমিকে ৪৬১

চোখে জল এসে যেত। তবু সে ছিল নাছোড়। বুধবার সেই লড়াইয়ের স্বীকৃতি মিলল।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০১:১৭
Share:

স্বাগতা। —নিজস্ব চিত্র।

তিন বছর ধরে ক্যানসারের যন্ত্রণা তার নিত্যসঙ্গী। তবু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সে পিছু হটেনি। তিন ঘণ্টা টানা লিখতে হাত টনটন করত। চোখে জল এসে যেত। তবু সে ছিল নাছোড়। বুধবার সেই লড়াইয়ের স্বীকৃতি মিলল।

Advertisement

তিনটি বিষয়ে ৮০ শতাংশ নম্বর-সহ মাধ্যমিকে ৪৬১ নম্বর পেয়ে আনন্দে কেঁদেই ফেলল উলুবেড়িয়ার বাণীবন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী স্বাগতা অধিকারী। তার কথায়, ‘‘আমার অসুখটা কঠিন জানি। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাব। নার্স হয়ে রোগীদের সেবা করতে চাই।’’

উলুবেড়িয়ার বাহিরতফার বাসিন্দা স্বাগতা ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছে। কখনও বুকে যন্ত্রণা হয়, কখনও পিঠে। সে একটানা বেশিক্ষণ বসতে-দাঁড়াতে পারে না। শ্বাসকষ্ট হয়। টানা লিখতেও পারে না। ইতিমধ্যে চারটি কেমোথেরাপি হয়েছে। মাধ্যমিক শুরু হওয়ার কিছুদিন আগেও কেমোথেরাপি নিতে হয়েছে তাকে। মেয়ের এই অসুখ, তার চিকিৎসা নিয়ে সর্বক্ষণ চিন্তায় থাকেন বাবা প্রকাশচিত্ত অধিকারী। সেই দুশ্চিন্তার মধ্যে স্বাগতার ৪৬১ নম্বর বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তিনিও বলছেন, ‘‘মেয়েটার মনের জোর খুব। কেমোথেরাপি নিতে ও কখনও ভয় পায় না। বলেছিল, কষ্ট হলেও আমি মাধ্যমিক দেব। আমরা খুব খুশি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, এখনও নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। খরচটাই যা চিন্তার।’’

Advertisement

ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে একবার হঠাৎ জ্বর হয় স্বাগতার। সঙ্গে বুকে-পিঠে যন্ত্রণা। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, ফুসফুসে টিউমার। অস্ত্রোপচারে ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর থেকে শুরু হয় চিকিৎসা। প্রকাশ আগে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করতেন। ছোট মেয়ের অসুখ ধরা পড়ার আগে বড় মেয়ের বিয়ে দেন। তার পরে স্বাগতার চিকিৎসার খরচ সামলাতে তিনি দোকান বিক্রি করে দেন। নিজের বাড়ির চারটি ঘর ভাড়া দিয়ে এখন স্ত্রী, ছোট মেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চালান। নিজেরা একটি ঘরেই থাকেন।

মেয়ের অসুখ ধরা পড়ার প্রথম কয়েক মাসের স্মৃতি এখনও টাটকা স্বাগতার মা অনিতার। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির পাশ দিয়ে বন্ধুরা স্কুলে যেত আর ও তখন জানলার গ্রিল ধরে কাঁদত। বলত, মা আমি কবে স্কুলে যাব? অসুখের জন্য ও অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেনি। স্কুল অবশ্য নবম শ্রেণিতে তুলে দেয়। ওর বাবাই ওকে স্কুলে দিয়ে আসত।’’

নিজের সাফল্যে স্কুলের অবদানের কথা বলতে ভোলে না স্বাগতা। তার কথায়, ‘‘নবম শ্রেণিতে প্রথম দিকে বন্ধুরা দূরে সরে থাকত। দিদিমণিরা সেটা দূর করে দিয়েছিলেন। তাঁরাই আমাকে ধরে ক্লাসে বসিয়ে দিতেন।’’ বাণীবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বনানী মাইতি অসুস্থ ছাত্রীর এই সাফল্যে গর্বিত। উচ্চশিক্ষার জন্য ভবিষ্যতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য লড়াই ছাড়ছি না’’—স্বাগতার গলায় প্রত্যয়ের সুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন