মেয়েরা চালাচ্ছেন গোটা ডাকঘর

পোস্টমাস্টার মহিলা। সহকারী পোস্টমাস্টার, পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে বাকি সব কর্মীও মহিলা। এই মুহূর্তে পুরোপুরি মহিলা পরিচালিত রাজ্যের একমাত্র ডাকঘর সম্প্রতি চালু হয়েছে হুগলির রিষড়ায়। আগে কলকাতায় একটি এ রকম ডাকঘর ছিল। তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

রিষড়া শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০২:১৮
Share:

রাজ্যের একমাত্র মহিলা পরিচালিত ডাকঘর। — নিজস্ব চিত্র।

পোস্টমাস্টার মহিলা।

Advertisement

সহকারী পোস্টমাস্টার, পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে বাকি সব কর্মীও মহিলা।

এই মুহূর্তে পুরোপুরি মহিলা পরিচালিত রাজ্যের একমাত্র ডাকঘর সম্প্রতি চালু হয়েছে হুগলির রিষড়ায়। আগে কলকাতায় একটি এ রকম ডাকঘর ছিল। তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

জিটি রোডের ধারে রিষড়া ফাঁড়ির কাছেই দক্ষিণ হুগলি বিভাগের এই ডাকঘরের পোশাকি নাম ‘রিষড়া উপ-ডাকঘর’। সম্প্রতি যিনি সেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে গেলেন, তিনিও এক মহিলাই— পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ।

শুধু মহিলাদের দিয়ে ডাকঘর চালানোর পরিকল্পনা কেন?

অরুন্ধতীদেবী জানান, গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলা পরিচালিত ব্যাঙ্ক আছে। অন্য নানা প্রতিষ্ঠানও আছে। এটা তেমনই একটি প্রয়াস। আরও কয়েকটা জায়গায় শুধু মাত্র মহিলাদের নিয়ে ডাকঘর খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’’

পোস্টমাস্টার, এক অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্টমাস্টার এবং ছ’জন পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট-সহ ১৫ জন মহিলা আপাতত ডাকঘরটি সামলাচ্ছেন। তবে বাড়ি-বাড়ি চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কাজ আপাতত পুরুষ পোস্টম্যানেরাই করছেন। দক্ষিণবঙ্গের ডিরেক্টর অফ পোস্ট অফিস রাজীব ওমরাহ বলেন, ‘‘এই ধরনের আরও ডাকঘর খোলা হবে, যাতে নারীশক্তিকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায়।’’

এমনিতে ডাক ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ডাক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, লজঝড়ে পরিকাঠামো নিয়ে ব্যাঙ্ক বা লগ্নি সংস্থার সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে তাঁরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিলেন। দেরিতে হলেও আধুনিক মানের পরিষেবা চালু করে ব্যবসা চাঙ্গা করতে উদ্যোগী হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কোর ব্যাঙ্কিং চালু হয়েছে। অরুন্ধতীদেবী বলেন, ‘‘গ্রামের ছোট ডাকঘরকেও (শাখা ডাকঘর) কোর ব্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আনা হবে। তার জন্য বছর দুয়েক সময় লাগবে।’’

বিভিন্ন জায়গায় প্রধান ডাকঘরে এটিএম পরিষেবাও চালু করা হচ্ছে। অরুন্ধতীদেবী জানান, পাঁচশোরও বেশি ডাকঘরে এটিএম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। অনলাইন শপিং ডেলিভারির কাজও হাতে নিয়েছেন তাঁরা। রবিবারেও জিনিসপত্র সরবরাহ করা হবে। মহিলা পরিচালিত ডাকঘরও এই নতুন উদ্যোগের অঙ্গ।

ডাক কর্তাদের মতে, নয়া ডাকঘরে মহিলা গ্রাহকেরা অনেক বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করবেন। রিষড়ার চিত্রা দে বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে অনেকে, বিশেষত ছাপোষা মহিলারা কিছু জিজ্ঞাসা করতে ইতস্তত করেন বা কুন্ঠাবোধ করেন। মহিলাদের কাছে তাঁরা যে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, সেটা বলাই বাহুল্য।’’ তাঁর মতে, ‘‘এ ভাবে সমাজে মহিলাদের গুরুত্ব যদি বাড়ে, সেটাও তো কম আনন্দের কথা নয়।’’

ডাকঘরের মাথাকে ‘পোস্টমাস্টার’ ডাকা চালু হয়েছিল বহু যুগ আগে। এ বার বোধহয় ডাক পাল্টানোর সময় এসে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন