বন্ধ: পুলিশ নির্দেশের পর বালি তোলা বন্ধ কানা দামোদরে। নিজস্ব চিত্র
কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই থানা-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর। অথচ সকাল-বিকেল জাঙ্গিপাড়ায় কানা দামোদর থেকে প্রকাশ্যে চলে বেআইনি ভাবে বালি তোলা। প্রশাসন বরাবর বিষয়টি নিয়ে উদাসীন ছিল বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল।
জাঙ্গিপাড়ায় কানা দামোদর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই সিন্ডিকেটের মাফিয়ারা বালি পাচার করে-এমন অভিযোগ বহুদিনের। ব্লকের এক দাপুটে তৃণমূল নেতা এবং তাঁর দাদার মদতেই সেই কাজ চলে বলে অভিযোগ। গরমকালে নদীতে যখন জল কম থাকে তখন পাম্পের সাহায্যে জল তুলে জেসিবি মেশিন দিয়ে বালি কাটা হয়। তার পরে ছোট ট্রাকে করে সেগুলি বিক্রি করা হয়।
বুধবার গ্রামবাসীদের তরফে এ ব্যাপারে বিএলএলআরও দফতরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়। অভিযোগ, নদীর পাশেই পাকা সড়ক। বালি তোলায় রাস্তাটির ক্ষতি হচ্ছে। সেটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বহু ট্রাক ওই সড়ক-সহ আশপাশের রাস্তা দিয়ে চলছে। তাতে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। বালি পাচার হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। দফতরের অফিসাররা বৃহস্পতিবার কাজ বন্ধ করে দেন। দফতরের আধিকারিকরা জানান, এর আগে ওই জায়গায় বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ কেউ জানাননি। এর পরেও ওই কাজ হলে থানায় এফআইআর করা হবে।
বিএলএলআরও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেআইনি ভাবে বালি তোলা বরদাস্ত করা হবে না। নজরদারি চালানো হবে। পুলিশকেও সেই
কথা বলেছি।’’
পুলিশের অবশ্য দাবি, ওই এলাকায় বালি চুরির মতো পরিস্থিতি তেমন নেই। দিন চারেক আগে বালি তোলার প্রস্তুতির খবর পেয়ে পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্বপাড়ায় গিয়ে অবশ্য দেখা গেল, জল তোলার একটি পাম্প পড়ে রয়েছে। নদীর এক পাশে বালির স্তূপ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের এক দাপুটে নেতা এবং তাঁর দাদার মদতে এই সব চলছে।’’ গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, পাচারকারীদের সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। এক মহিলার কথায়, ‘‘রাস্তার ধারেই ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ চলে। পুলিশ-প্রশাসন এত দিন চোখে দেখেনি!’’
বালি পাচার চক্রে তৃণমূলের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএমের জাঙ্গিপাড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অলোক সিংহরায় এবং বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পাল। তৃণমূলের হুগলি জেলা কোর কমিটির সদস্য সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য জুড়েই বেআইনি বালি খাদান বন্ধ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। জাঙ্গিপাড়ায় এমনটা হয়ে থাকলে প্রশাসন নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। আমাদের দলের কেউ এর মধ্যে জড়িত, এমন প্রমাণ মিললে দল কড়া ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।’’