কুকুরের দাপটে নাকাল দুই জেলা

পরিকাঠামো নেই, মানছে সব পুরসভাই

এই বিষয়ে পুরসভার কোনও হেলদোল নেই। আর প়ঞ্চায়েতগুলোর দাবি, এই বিষয়ে তাদের কিছুই কর্তব্য নেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০২
Share:

মেজাজে: প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে এরাই। নিজস্ব চিত্র

ছবি এক: রাতে বাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কী দুর্ভোগেই না পড়েছিলেন বাউড়িয়ার বিশ্বজিৎ কর্মকার। ধাওয়া করেছিল রাস্তার গোটা আটেক কুকুর। পায়ে কামড়ে দেওয়ার উপক্রম। কোনওক্রমে জোরে বাইক চালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।

Advertisement

ছবি দুই: মাস খানেক আগেই চণ্ডীতলায় একটা রাস্তার কুকুরের মাথার অর্ধেকটা পোকায় ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। দুর্গন্ধে টেঁকা দায় হচ্ছিল স্থানীয়দের। কী করতে হবে, কাকে জানাতে হবে বুঝতে পারছিলেন না কেউ। শেষে হিন্দোল আহমেদ নামে এক যুবকের তৎপরতায় সমস্যা মেটে।

ছবি তিন: দুই পাড়ায় গোটা ১২ কুকুরের মারামারির মধ্যে পড়ে জখম হয়েছিলেন মনোরমা পাল নামে উত্তরপাড়ার এক বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘আগে পাড়ায় এত কুকুর ছিল না। এখন যেন রাস্তায় দাপট কুকুরেরই। ভয়ে লাঠি নিয়ে যাতায়াত করি।’’

Advertisement

হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকার চেনা ছবি এখন এমনটাই। দুই জেলারই এলাকারবাসীর অভিযোগ, কুকুরের দাপটে রাস্তায় হাঁটা মুশকিল। শহরের বহুতল আবাসনের গ্রিল কিংবা দরজার ফাঁক গলে সিঁড়ি বেয়ে ছাদের ঘরে উঠে সংসার পেতে ফেলছে তারা। আবার কুকুর পাগল হয়ে গেলে, আতঙ্কে থাকেন বাসিন্দারা। পিটিয়ে মেরে ফেলতে হয় তাকে। এই বিষয়ে পুরসভার কোনও হেলদোল নেই। আর প়ঞ্চায়েতগুলোর দাবি, এই বিষয়ে তাদের কিছুই কর্তব্য নেই।

কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কুকুরের সুমারি করার কথা। বছর তিনেক আগে তৎকালীন প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েওছিলেন সে কথা। কিন্তু ২০১৭ সালে দাঁড়িয়ে কোনও পুরসভার কাছে এ নিয়ে বিন্দুমাত্র তথ্য নেই। একমাত্র পান্ডুয়া সমষ্টি প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতর জানাতে পেরেছে, ১৯তম পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১-২০১২ সালে ব্লকে সারমেয় সংখ্যা ৯২৪।

বহুবার রাস্তার কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এলাকা বা আবাসনের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্তরা প্রতিবারই কুকুরদের অত্যাচারের অজুহাত দিয়ে পার পেয়ে গিয়েছেন। উঠেছে কুকুরদের সংখ্যা বাড়ার প্রসঙ্গও। এখানে প্রশ্ন হল, রাস্তার কুকুরদের নির্বীজকরণ বা বন্ধ্যাত্বকরণের যে দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের নেওয়া প্রয়োজন, তা হয় না কেন?

কুকুর ধরার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা মানছেন একাংশ পুরকর্তাও। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা নেই।’’ শহরে এমন কুকুর রয়েছে, যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কারও গায়ে ঘা, কারও লোম উঠে গায়ে লালচে দাগ পড়েছে। এই ধরনের কুকুরের রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুর-কর্তা মানছেন, “প্রায় সব কুকুরই কৃমিতে আক্রান্ত। এদের ওষুধ খাওয়ানো দরকার। বিস্কুট বা মিষ্টিতে ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ভ্যাকসিনও দেওয়া যেতে পারে।’’ কিন্তু সেই সব উদ্যোগ চোখে পড়ে কই?

চুঁচুড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বসতি এলাকা থেকে দূরে এলাকায় কুকুরের একটা খামার তৈরির প্রকল্পের পরিকল্পনা হয়েছে। নির্বীজকরণের কাজ হলেও কুকুর ধরে রাখার মতো কোনও জায়গা নেই। তার ফলে কুকুর ধরার পরিকল্পনা আপাতত প্রায় বন্ধ। শ্রীরামপুর পুরসভার এক কাউন্সিলরের সাফাই, ‘‘পথ-কুকুর সামলানোর ব্যাপারে আমরা অসহায়। শহরে অসুস্থ প্রাণীদের রেখে চিকিৎসা করার একটা সংস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নেওয়া হয়।’’ আর হাওড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কুকুর ধরার জন্য পুরসভার মতো পরিকাঠামো পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় নেই। তবে সমস্যাটি যেহেতু বাড়ছে তাই বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদে আলোচনা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন