তার দিয়ে বাঁধা দগ্ধ দেহ উদ্ধার যুবকের

রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড়ের নিস্কো হাউজিং এলাকায়। খবর পেয়ে আসে নিশ্চিন্দা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও। গোয়েন্দা বাহিনী, পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হয়। তবে রাত পর্যন্ত ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, যুবকের মাথা-মুখ এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে যে চেনার উপায় নেই। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, এটি খুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

বেলুড়ের নিস্কো হাউজিংয়ে তদন্তে পুলিশ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

সকালে জঞ্জালের স্তূপে চোখ যেতে সকলে দেখেছিলেন, সেখান থেকে ধোঁয়া উঠছে। প্রথমে বাসিন্দারা ভেবেছিলেন কেউ আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়েছে। কিন্তু বেলা বাড়তেও ধোঁয়া বন্ধ না হওয়ায় সামনে যেতেই ভুল ভাঙে তাঁদের। দেখা যায়, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক যুবকের দগ্ধ দেহ।

Advertisement

রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড়ের নিস্কো হাউজিং এলাকায়। খবর পেয়ে আসে নিশ্চিন্দা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও। গোয়েন্দা বাহিনী, পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হয়। তবে রাত পর্যন্ত ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, যুবকের মাথা-মুখ এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে যে চেনার উপায় নেই। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, এটি খুন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই হাউজিংয়ের একেবারে শেষ প্রান্তে আগাছার জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। মাঝেমধ্যেই সেখানে আগুন ধরানো হয়। রাতেও নির্জন থাকে ওই এলাকা। পাশে রয়েছে পি এন কলোনির দিকে যাওয়ার রাস্তা। রাস্তার উল্টো দিকে কয়েকটি বাড়ি। এক বাসিন্দা রবীন জানার দাবি, ‘‘ধোঁয়া দেখেছি। তবে রাতে কিছু টের পাইনি।’’ একই দাবি অন্য বাসিন্দাদেরও।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, হাঁটু মুড়ে দু’টি হাত শক্ত করে অ্যালুমিনিয়ামের তার দিয়ে বাঁধা অবস্থায় যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। গোটা শরীরও ছিল তার দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, পেট্রোল ঢেলে তার পরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবর্জনার স্তূপে প্লাস্টিক থাকায় আগুন ধরতেও সুবিধা হয়েছে। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ বিষয়টি যখন সকলের নজরে আসে, তখনও ঘটনাস্থল থেকে উঠছিল ধোঁয়া। তবে অন্য কোথাও যুবককে খুন করে ওই নির্জন জায়গায় এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, না তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে— তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা সৌমেন বটব্যাল বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই শনিবার রাত দেড়টা পর্যন্ত জলসা হয়েছে। কেউ কিছু টের পাইনি। সকালে জানতে পারি।’’ একই কথা বলেছেন আর এক নেতা নয়ন গুহ। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রথমত, রাত দেড়টা পর্যন্ত জলসা চলে কী ভাবে? দ্বিতীয়ত, কোনও মানুষকে পোড়ানো হলে তার একটা গন্ধও তো বাতাসে ভেসে থাকে। কেউ সেটা টের পেলেন না কেন? এ বিষয়ে অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। ঘটনাটি আরও গভীর রাতের কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলেই দাবি তদন্তকারীদের। ফরেন্সিক পরীক্ষা ও ময়না-তদন্তের পরে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দিন পুলিশ কুকুর ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে পরিত্যক্ত একটি কোয়ার্টার্সের সামনে গিয়ে ফিরে আসে।

স্থানীয়েরা জানান, এর আগেও খুন করে দেহ ফেলে রাখার ঘটনা ঘটেছে সেখানে। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় দুষ্কৃতীরা তার সুযোগ নেয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলের কাছেই রয়েছে একটি বাতিস্তম্ভ। এ দিন দেখা যায়, সেটির তার কাটা। তবে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শনিবার রাত থেকেই আলো জ্বলছে না। আবার অনেকের দাবি, দু’-তিন দিন ধরে আলো জ্বলছে না। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, যে বা যারাই কাজটি করে থাকুক, তারা এলাকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

কিন্তু বাসিন্দারা কেন কিছু টের পেলেন না, তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরাও। সব জেনেও তাঁরা ভয়ে চুপ করে আছেন কি না, সেটাও এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (উত্তর) প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, ‘‘এলাকায় কেউ নিখোঁজ ছিলেন বা আছেন বলে জানা যায়নি। তবে আশপাশের সব থানায় খবর পাঠানো হয়েছে। কেউ কিছু টের পেলেন না কেন, সেটা এবং অন্য সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন