পুরভোট ঘিরে হিংসা শুরু, দুই বিজেপি কর্মীকে কোপ

পুরভোটের দামামা বাজতেই শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক হানাহানি। প্রচারের প্রস্তুতি হিসেবে একটি দেওয়াল-লিখনের সময়ে বিজেপির কয়েক জন কর্মী-সমর্থককে মারধর এবং দু’জনকে ভোজালি দিয়ে কোপানোর ঘটনাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তেতে উঠল হুগলির ভদ্রেশ্বর। এর জেরে শুক্রবার রাস্তা অবরোধ, থানায় বিক্ষোভ কিছুই বাদ গেল না। হামলায় তৃণমূলের লোকজনই জড়িত বলে অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের এটা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

আহত এক বিজেপি কর্মী সুজিত রাম। ছবি: তাপস ঘোষ।

পুরভোটের দামামা বাজতেই শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক হানাহানি।

Advertisement

প্রচারের প্রস্তুতি হিসেবে একটি দেওয়াল-লিখনের সময়ে বিজেপির কয়েক জন কর্মী-সমর্থককে মারধর এবং দু’জনকে ভোজালি দিয়ে কোপানোর ঘটনাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তেতে উঠল হুগলির ভদ্রেশ্বর। এর জেরে শুক্রবার রাস্তা অবরোধ, থানায় বিক্ষোভ কিছুই বাদ গেল না। হামলায় তৃণমূলের লোকজনই জড়িত বলে অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের এটা। তারা বিজেপির বিরুদ্ধে ওই রাতে দলীয় সমর্থকদের উপরে হামলার পাল্টা অভিযোগ তুলেছে।

এই চাপান-উতোর এবং অশান্তিতে বিরক্ত এলাকাবাসীর অনেকেই বলছেন, প্রার্থী ঘোষণা না হতেই এই অবস্থা। প্রার্থী ঘোষণা হলে কী হবে!

Advertisement

ভোজালির কোপে জখম প্রভু চৌধুরী এবং সুজিত রাম নামে দুই বিজেপি সমর্থককে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রভুর ডান কাঁধে গভীর ক্ষত হয়েছে। সুজিতের শরীরের নানা জায়গায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। ভোজালির কোপে তাঁর কপাল থেকে চোয়াল পর্যন্ত ক্ষত হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, ওই রাতেই ভদ্রেশ্বর থানায় অভিযোগ জানাতে যাওয়া হলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। উল্টে তাদের এক জনকে আটক করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা প্রথমে ভদ্রেশ্বর থানার সামনে কিছু ক্ষণ জি টি রোড অবরোধ করেন। পরে থানায় গিয়ে এক ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

ভদ্রেশ্বর থানা অভিযোগ না নেওয়ার কথা মানেনি। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীরও দাবি, “পুলিশ অভিযোগ নেয়নি, এটা ভুল কথা। ওঁরা সে দিন কোনও অভিযোগ করতে আসেননি।” শুক্রবার সকালে বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূল সমর্থক বলরাম রায় এবং রাজু চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই হামলা হয় বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ জানায় থানায়। পুলিশ সুপার বলেন, “দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা না হলেও প্রচারের প্রস্তুতি হিসেবে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ভদ্রেশ্বরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গেটবাজারের একটি দেওয়াল-লিখনের কাজ করছিলেন জনা সাতেক বিজেপি সমর্থক। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ জনা ৪০ যুবক লাঠি, রড, ভোজালি এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপরে চড়াও হয়। কিছু ক্ষণ তর্কাতর্কির পরেই শুরু হয় মারধর, ভোজালি দিয়ে কোপানো। চেঁচামেচিতে স্থানীয়েরা চলে এলে হামলাকারীরা পালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিজেপি নেতারা। সুজিতের মুখে ৩৭টি সেলাই পড়েছে। তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই। প্রভুর কাঁধেও সেলাই পড়েছে।

শুক্রবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রভু বলেন, ‘‘যে জায়গায় আমরা কাজ করছিলাম, সেখানটা অন্ধকার থাকায় তৃণমূলের সশস্ত্র ছেলেরা যে হামলা করতে আসছে, প্রথমে বুঝতে পারিনি। ওরা সংখ্যায় বেশি ছিল। আমরা প্রতিরোধ করতে পারিনি। ওরা আমাদের খুনের মতলবেই এসেছিল। বিজেপি করা যাবে না বলে ওরা শাসিয়েছে।” জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি স্বপন পালের দাবি, “লোকসভা নির্বাচনে ভদ্রেশ্বরে আমাদের দলের ফল ভাল হওয়ায় পুরভোটে আতঙ্কে ভুগছে তৃণমূল। তাই হামলা।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ভদ্রেশ্বরের তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের উপ-পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “হামলায় আমাদের কেউ জড়িত নন। প্রার্থী নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যে গোলমাল চলছে। তার জেরেই ওই ঘটনা। মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদের দলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ওই রাতে গেটবাজারে আমাদেরই কয়েক জন সমর্থককে মারধর করে বিজেপির ছেলেরা।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তও দাবি করেছেন, বিজেপি সমর্থকদের উপরে হামলায় দলের কেউ যুক্ত নয়। টিকিট পাওয়া নিয়ে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন